কেয়ারটেকার-নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াই চলছে জবির শিক্ষক ডরমিটরি
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৩:০৮ PM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৩:০৮ PM
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) রয়েছে আবাসন সংকট। ১৬ বছর পরে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হলের উদ্বোধন হলেও এখনও অনিশ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের আবাসন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮টি বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৭০০ জন। কিন্তু এই বিশাল অঙ্কের শিক্ষকদের বসবাসের জন্য রয়েছে একটি মাত্র ডরমিটরি। যেখানে রয়েছে মাত্র ৪০ জনের বসবাসের ববস্থা।
জানা গেছে, একমাত্র এই ডরমিটরিতেও নেই বসবাসের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা। পুরান ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এই ডরমিটরিতে নিরাপত্তার জন্য নেই কোন ব্যবস্থা, ডরমেটরি ভবনে নেই কোন নিরাপত্তাকর্মী বা সিসি ক্যামেরা। তাই নিরাপত্তার দিক দিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরির শিক্ষকরা। এছাড়াও রয়েছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও কেয়ারটেকারের অভাব, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ না থাকা, এমনকি ডরমিটরি দেখভালের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির লাইনে কোন সমস্যা হলে বা কোন কিছু নষ্ট হলে কে ঠিক করবে এমন সিদ্ধান্তে ঝামেলা পোহাতে হয় শিক্ষকদের। অনেক সময় বাধ্য হয়ে শিক্ষকেরা নিজেরাই অনেক কিছু ঠিক করে নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডরমিটরিতে ঢুকতেই নিচের প্রবেশদ্বার খোলা। নেই কোন কেয়ারটেকার, নিরাপত্তা কর্মী বা সিসি ক্যামেরা। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে ছাদের দরজাও উন্মুক্ত দেখা যায়। এছাড়া ভবনের পাশে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় ময়লার স্তুপ । ছয়তলা ভবনের বিভিন্ন রুম থেকে ময়লা সরারসরি নিচে ফেলায় কোন কোন ফ্লাটের বাইরের চিলেকোঠা ও জানালার উপরেও ঝুলে আছে ময়লা। ড্রেনগুলো উন্মুক্ত। পয়ঃনিষ্কাশন না হওয়ায় মশা মাছি ভনভন করতে দেখা যায়।
এসব বিষয়ে ডরমিটরিতে বসবাস করা কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এখানে বসবাসের পরিবেশ খুবই খারাপ। কেয়ারটেকার না থাকায় ভবনের কোন কিছু নষ্ট হয়ে গেলে আমাদেরকেই ঠিক করতে হয়। প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে ময়লা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। পাশের ড্রেনে ময়লা নিষ্কাশন হয় না বলে আমরা ডেঙ্গুর আশঙ্কায় থাকি। কোন পরিচালনা কমিটি না থাকায় মান সন্মানের কারণে অন্য কাউকে বলতেও পারি না।
শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকদের বসবাসের এ ভবনে নিরাপত্তার জন্য কোন সিকিউরিটি গার্ড বা সিসি ক্যামেরাও নেই। কে ভবনে আসে যায় দেখার কেউ নেই। কোন নীতিমালা না থাকাই যে যেভাবে পারেন বসবাস করছেন। যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যথাযথ নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ নিয়েও আমাদের বসবাসের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তবুও আমরা রাজি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, ডরমিটরিতে নীতিমালা অনুসরণ না করে মৌখিক ভাবেই শিক্ষকের থাকার অনুমতি প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে লবিং তদবির করতে পারলেই পছন্দের শিক্ষকদের মেলে ডরমিটরিতে থাকার সুযোগ। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মকানুন বাদেই নিজেদের মতো করে বসবাস করে আসছেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ‘ডরমিটরি পরিচালনা কমিটি’ নামে ছয় সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে আহবায়ক ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ, ছাত্র কল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকি এবং অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক ড. কাজী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। কিন্তু ডরমিটরিতে বসবাসকারী কোন শিক্ষক প্রতিনিধিকে কমিটিতে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ডরমিটরি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন,‘‘নীতিমালা অনুসারে নতুন করে শিক্ষকদের ডরমিটরিতে উঠতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সকল সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ডরমিটরিতে সিট বরাদ্দ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ডরমিটরি সংস্কার, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তাকর্মীসহ যে যে সুবিধাগুলো লাগে তার ব্যবস্থা করা হবে।’’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ডরমিটরি পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে শিক্ষকরা ডরমিটরিতে বসবাস করে আসছেন । এতোদিন নীতিমালার প্রয়োগ ও পরিচালনা কমিটি না থাকায় ডরমিটরিতে সমস্যা ছিল। ২০১৯ সালের জুন বা জুলাইয়ের দিকে একটি নীতিমালা পাশ হয়। তবে এতোদিন নীতিমালার প্রয়োগ ছিল না। এখন থেকে ডরমিটরির নতুন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নীতিমালা মেনে শিক্ষক তোলার পর ডরমিটরির সকল সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা শিক্ষক সমিতি আশা করছি।’’