পরীক্ষা দিতে চায় শিক্ষার্থীরা, সরকারের অনুমতি চায় প্রশাসন
প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলেও এবারে করোনাভাইরাসের কারণে তা শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী সেশন জটিলতা এড়াতে এখনই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমতি ছাড়া পরীক্ষা নিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও পুরোনো বর্ষের পরীক্ষার ধাপ এখনো পেরোতে পারেননি তারা। সেমিস্টার সিস্টেমের কারণে দুইটা সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা এবং দুই সেমিস্টার পরীক্ষা গ্রহণ সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। আবার সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথাও ভাবতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। এভাবে একটি শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘায়িত হয়ে সেশনজটের ভয়কে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
এদিকে ক্যাম্পাস খুলে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে গত ১২ জানুয়ারী উপাচার্যের বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্বিবদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের একাংশ। তারা জানান, করোনাকালীন লকডাউনে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। তখনকার চলমান সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করে নতুন সেমিস্টারের সিলেবাস সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
একই দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করে ছাত্র ইউনিয়ন। ক্যাম্পাস খুলে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়াসহ ৮ দফা দাবি জানান তারা। শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন বলেন, অনতিবিলম্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ এবং অভিজ্ঞদের সমন্বয় করে কোভিড পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাস খোলার রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
৭ দফা আন্দোলনের সমন্বয়ক তওসিব মাহমুদ সোহান বলেন, করোনার জন্য প্রায় এক বছর শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে চলে গেছে। ইতোমধ্যে দেশের সব কার্যক্রম ঠিকমত চললেও শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারেই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদাসীন। সবকিছু যেহেতু ঠিকমত চলছে তাই অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সবার মতামত নিয়ে আমরা মিড পরীক্ষাগুলো নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম না, বছর শেষ হওয়ার পর আমাদের কোনো শিক্ষার্থী জটে পড়ে থাকুক। আমাদের শিক্ষার্থীরা আবারও আবেদন করেছে পরীক্ষা দেয়ার বিষয়ে। আমরা একাডেমিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, এখনই পরীক্ষা নিতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীদের সেশনজট কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো। অনেক শিক্ষার্থী ঢাকায়ই আছে, বিভাগ চাইলে পরীক্ষা নিবে। আর শিক্ষার্থীরাও সবাইকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা পরীক্ষা দিতে চায় কিনা। কেউ পরীক্ষা দিতে চায় আবার কেউ চায় না; এরকম যাতে না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা পরীক্ষা নিয়ে ভাবছি না। সরকার যখন আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিবেন আমরা তখনই পরীক্ষা নিবো।’’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সীমিত পরিসরে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খোলাই আছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেই পারপাসে খুলছে সেই পারপাস ইতোমধ্যে আমাদের শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স ও মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা গত ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এখন শেষের পথে।
জবি উপাচার্য বলেন, অনেকের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় এপেয়ার্ড সার্টিফিকেটও দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এগিয়ে আছি। এখন আমরা খুলবো ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার জন্য। সরকার যখন অনুমতি দিবে তখন আমরা দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস চালু করবো। কিভাবে ক্লাস পরীক্ষা নেয়া যায় তা নিয়ে আমরা ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করছি।