ইবিতে আবাসন ব্যবস্থা নেই ৭৬% শিক্ষার্থীর
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিততো দূরের কথা তার ধারেকাছেও নেই কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। যদিও ১৯৭৯ সালে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বলা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবাসিকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আরও বলা হয়েছিল আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার তিন যুগেও সিকিভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধাও নিশ্চিত করতে পারেনি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যাবস্থা আছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাধ্য হয়ে দুই জেলা শহরে এবং ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করতে হয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ (২০১৯) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শতকরা ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধার বাইরে রয়েছে। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়তে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
শিক্ষার্থীদের এ আবাসন সংকট চরমে পৌঁছানোর পেছনে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র রাজনীতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছাকেও দায়ী করেছেন অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে সম্পূর্ণ আবাসিক। দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৪২ বছর অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। কোন এক অদৃশ্য কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হয়ে ওঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব ও সদিচ্ছার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট আজ চরম পর্যায় পৌছায়ছে। তাই আমরা আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুত আবাসন সংকট নিরসনে নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত করবে।
ইবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সভাপতি সভাপতি নূরুন্নবী ইসলাম সবুজ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যাবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আবাসন ব্যবস্থা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বরাবরই শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার উর্বর ক্ষেত্র সেহেতু শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চার জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।’
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি আবাসিক হল ও ছাত্রাবাস রয়েছে। এসব হল ও ছাত্রবাসে ৩ হাজার ৫৯৪ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা আছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৯৪৬ জন ছাত্র ও ১ হাজার ৬৪৮ জন ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার ৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আছে। আর বাকি ৭৬ শতাংশের জন্য নেই কোনো আবাসানের ব্যবস্থা।