বছরজুড়েই আলোচনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা  বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত  © ফাইল ফটো

নতুন বছরের নতুন দিগন্তের সূর্যের আলোক ছটায় ২০২০ সাল শুরু হয়েছিল, দেখতে দেখতে বছরের শেষ সূর্য অস্তমিত হতে যাচ্ছে। বিশের বিষে যেমন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত হয়েছে, করোনা মহামারীতে থমকে গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটে গেছে বিভিন্ন ঘটনা। কখনো আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তেমনি প্রশংসাও কুড়িয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

বেতন ফি কমানো, আবাসন সংকট নিরসন, পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতি চালু, মুক্তচিন্তা বিকাশে সহায়ক অধ্যাদেশ ব্যবস্থার দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে জানুয়ারির প্রথম দিনেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।এরপর চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবিসহ সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখতে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. শেখ মো. রজিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ডিনদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

আবাসিক হলে মাদকাসক্ত হয়ে রাতভর ৫ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে মাদকাসক্ত হয়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। নির্যাতনকারীরা ইংরেজি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে গত ২৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিভাগের প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে দুই শিক্ষার্থী গ্রেফতার

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। তারা হলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচ আর এম) ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নূর মোহাম্মাদ অনিক (২৪) ও পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. মোজাহিদুল ইসলাম রাফি (২৩)। ২৪ জানুয়ারি শনিবার ভোরে নগরীর গল্লামারী এলাকার একটি বাড়িতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) একটি বিশেষ টিম দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বেশি সময় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন।

উদ্ভাবনীতে আবারও দেশসেরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বের ৭০২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর স্পেনের সিমাগো ল্যাব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস পরিচালিত (ইনডেক্স জার্নালভিত্তিক) জরিপে দ্বিতীয় বারের মত আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং-এ স্থান করে নেয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভাবনী ক্যাটাগরিতে গত বছরের চেয়ে ২৮ ধাপ এগিয়ে বৈশ্বিক ৪২১তম স্থানে এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক অবস্থান এবার ৬৯৯তম। অন্যদিকে এই তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সার্বিক ক্যাটাগরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় স্থানে।

অসহায়দের পাশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা মহামারীতে চলমান উদ্ভূত বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (কুয়া), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (কুটা), হেল্প স্কোয়াড খুলনা, ভলান্টিয়ার অ্যাগেইনস্ট কন্টাজিউন (ভিএসি), বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, প্রবাসে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাধ্যমতো এগিয়ে আসে। দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে গত ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে স্বেচ্ছায় পনেরো লাখ টাকা দান করেছে খুবি। ৯ মে খুবি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) আরও এক লাখ টাকা ওই তহবিলে জমা দেয়।দেশব্যাপী ধাপে ধাপে লকডাউন শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের তিন হাজার টাকা প্রদান করে কুয়া।একই সাথে বাইরের সাধারণ মানুষের পাশেও বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল এই সংগঠনটি।

বিনা সুদে ঋণ প্রদান খুবির অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের

করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি ডিসিপ্লিনের ১৪ জন করে মোট ৪০৬ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্পূর্ণ বিনা সুদে শিক্ষা মেয়াদের মধ্যে শিক্ষার্থীরা তা পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

অনলাইন ক্লাস

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় টার্মের ভার্চুয়াল ক্লাস চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত নেন। উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের সাথে দুই ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্স শেষে এ সিদ্ধান্ত নেন। এরপর পুরোদমে অনলাইন ক্লাস শুরু হয় সকল ডিসিপ্লিনের।

ছাত্র আন্দোলনে ‘উস্কানি’ দেয়ায় ৪ শিক্ষককে শোকজ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে শোকজ করে কর্তৃপক্ষ। ১৩ অক্টোবর তাদের শোকজ করা হয় এবং তিনদিনের মধ্যে জবাব দেয়ার কথা বলা হয়।শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ হলেন, বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী, বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম ও ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রভাষক আয়েশা রহমান আশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত শোকজ পত্রে বলা হয়, গত ২ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে উপাচার্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। যা বে-আইনি, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আর চিঠিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সরাসরি বলা হয়েছে, উক্ত বিষয়ের সঙ্গে আপনাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য হোসনে আরা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. হোসনে আরাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য হিসাবে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে এ নিয়োগ পান।১২ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক আদেশে এ নিয়োগ দেয়া হয়


যাদেরকে হারিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়


সাবেক উপাচার্য: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবদুল কাদির ভূঁইয়া ৩১ শে মে শনিবার দিবাগত রাত ১০টা ১৫মিনিটে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় নিজবাসায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও চারপুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

শিক্ষক: চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমান।শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে খুলনা রেলস্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি সয়েল, ওয়াটার, এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন শিক্ষক ছিলেন। এছাড়াও সয়েল ডিসিপ্লিনের প্রতিষ্ঠাতার সাথে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে তিনিও ছিলেন।

শিক্ষক ও হল প্রভোষ্ট: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. শামীম আখতার (৪৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ০৯ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।


সর্বশেষ সংবাদ