হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
গত মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সভাকক্ষে ১১৯তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কোনক্রমেই আবাসিক হলগুলো খোলা হবে না বলে জানানো হয়। এ বিষয়টি নজরে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
আবাসিক হল খুলে পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার তারা।
সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি তুলে ধরেছে। তাদের দাবিগুলো হলো, হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা না নেয়া। বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া প্রস্তাবনার আলোকে হলসমূহ খুলে দেওয়া। অতঃপর চূড়ান্ত বর্ষের অসমাপ্ত পরীক্ষার আয়োজন করা। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল। তাদের জন্য রিভিউ ক্লাসের ব্যবস্থা করা। রিভিউ ক্লাস ছাড়া অপ্রস্তুত অবস্থায় পরীক্ষার আয়োজন না করা।
এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন আজাদ বলেন, ‘আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রকারান্তে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুকূপে ধাবিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হলসমূহ খোলা যেতে পারে। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এ বিষয়ে কার্যকরী রোডম্যাপ প্রদান করেছে। এছাড়াও প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতিতে অনলাইনে সম্পন্ন হওয়া কোর্সের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ যেমন অনুচিত হবে; তেমনই এতে দেশে অপরিপক্ব গ্রাজুয়েট তৈরি হবে। একান্তই যদি আবাসিক হলসমূহ খোলা সম্ভব না হয়, তবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ফলাফল বিবেচনা করে আনুপাতিক হারে চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুত করা যেতে পারে। আশা করি, গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন বলেন,‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে হল সমূহ খুলে পরীক্ষা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়া মানে শিক্ষার্থীর শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলে দেওয়া । তাই হল খুলে আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়া হোক।
বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল বিন শরিফ বলেন,‘ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ পর্ব ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেই সাথে আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়া মোটেও যৌক্তিক নয়। আমার মতে মেসে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার চেয়ে হলে থেকে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ। তাই পরীক্ষা নেওয়ার আগে আবসিক হল খুলে দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধ রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা শিক্ষার্থীদের সাথে এক ধরনের চরম অবিচার। কারণ পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জন্য ইবির আশেপাশে ভৌগোলিক অবস্থান অনুকূলে নয়। পাবলিকিয়ান অধিকাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে যারা টিউশনি করে তাদের পড়াশুনার ব্যয়ভার বহন করে। তাদের পক্ষে নতুন করে ম্যাচে উঠার ব্যয়ভার বহন করা মোটেও সম্ভব নয়। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খোলা রেখে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য জোর দাবী করছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড.সাইদুর রহমান বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে হল খোলা সম্ভব নয়। এটির সংক্রমণের আতঙ্ক থেকে যায়। তাই সরকারি নির্দেশে মোতাবেক আমরা পরীক্ষার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’