২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৪০

পতাকা অবমাননার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

পতাকা বিকৃতি ও অবমাননার অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে  © টিডিসি ফটো

মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কয়েকজন শিক্ষক কর্তৃক জাতীয় পতাকা বিকৃত করে অবমাননার সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।

রংপুর জেলা প্রশাসক হাসিব আহসান জানান, জাতীয় পতাকা বিকৃতির ঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে জাতীয় পতাকা বিকৃতির প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সে কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মামলার প্রধান বাদী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, আমি রংপুর জেলা প্রশাসন তদন্ত রির্পোট এখনো দেখিনি, গণমাধ্যমে জেনেছি কিছু বিষয়। আমি পতাকা অবমাননার ঘটনা প্রতিবাদ করে প্রথম ফেসবুকে পোস্ট দেই এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো অভিযোগ থাকার পরও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমি একজন সংক্ষুব্ধ নাগরিক হিসেবে একজন সহকর্মীকে নিয়ে পরদিন সন্ধ্যায় তাজহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। যা আদালতের নির্দেশে পুলিশের তদন্তাধীন।

তিনি আরও বলেন, এ মামলার উদ্যোগ নেওয়ার কাজটি ছিল স্থানীয় জেলা প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেছে কিন্তু আমি প্রধান বাদী হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। নিশ্চয় রংপুর জেলা প্রশাসন জানে পতাকা অবমাননারা নির্দেশদাতা হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অভিযুক্ত করেছি। অথচ তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত উপাচার্যকেই অন্যান্যদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। একজন উপাচার্য যেহেতু নিজেই অভিযুক্ত সেহেতু তা তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

গত বৃহস্পতিবার গঠন করা ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার জিন্নাহ আল মামুন।

এদিকে, এ ঘটনার সাতদিন পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ঢাকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঁয়াজু অফিসে সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল ইসলামকে আহবায়ক, প্রক্টর আতিউর রহমানকে সদস্য সচিব এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সুচিতা সুচিত্রা শারমিনকে সদস্য করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিজয় দিবসের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক একটি বিকৃত জাতীয় পতাকার উপর পা দিয়ে ফটোশেসন করে ফেসবুকে দেয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে দোষীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাস ও পার্কের মোড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন হচ্ছে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাজহাট থানায় পৃথক দু’টি এজাহার করেছেন। রোববার রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শওকত আলী এ দু’টি তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।