জবির আইন বিভাগে যত বেআইনি কাজ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগেই চলছে যত বেআইনি কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগেই আইন অমান্য করে ১১ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস। শুধু তাই নয় পর পর দুই মেয়াদে ডিনের দায়িত্ব পালনের নিয়ম না থাকলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গ করে পর পর তিনবার ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঝে অন্য একজন দুই বছরের জন্য ডিনের দায়িত্ব পালন করলেও পরে চতুর্থবারের মত পুনরায় তিনি ডিন হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বা নিয়ম মানার কোনো বালাই নেই বলে অভিযোগ অন্যান্য শিক্ষকদের।
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (২০০৫) এর ২৪ নং ধারার ২ নং উপধারায় বলা আছে, বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্য হতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বছর মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। ২৪ নং ধারার ৩নং উপধারায় বলা আছে, যদি কেন বিভাগে অধ্যাপক না থাকেন তাহলে ভাইস-চ্যান্সেলর সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্য হতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে একজনকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবেন। তবে শর্ত হলো, সহযোগী অধ্যাপকের নিম্নের কোন শিক্ষককে বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা যাবে না। আরো শর্ত থাকে যে, সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার কোন শিক্ষক কোন বিভাগে কর্মরত না থাকলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রবীণতম শিক্ষক সে বিভাগের চেয়ারম্যান হবেন।
কিন্ত আইন বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আইন মানা হয়নি। সরকার আলী আক্কাস ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই বর্তমান সময় পর্যন্ত একাধারে ১১ বছর যাবৎ বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে আইন বিভাগে দুইজন সহযোগী অধ্যাপক আছে কিন্তু তাদের মধ্য থেকে কাউকেই এখন পর্যন্ত পালাক্রমের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি।
এছাড়াও ডিন হিসেবে নিযুক্তির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় আইন (২০০৫) এর ২২ নং ধারার ৫ নং উপধারায় বলা আছে, ‘ভাইস-চ্যান্সেলর সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে প্রত্যেক অনুষদের জন্য এর বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য হতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে দুই বছর মেয়াদের জন্য ডিন নিয়োগ দিবেন। তবে শর্ত হলো, কোন ডিন পরপর দুই মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হতে পারবেন না। আরো শর্ত রয়েছে যে, কোন বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং কোন বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করে থাকলে ওই বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে অবশিষ্ট অধ্যাপকগণ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযোগের সুযোগ পাবেন। তবে, একাধিক বিভাগে সমজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক থাকিলে সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ডিন পদের আবর্তনক্রম ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নিদিষ্ট হইবে।’
দেখা যায়, এক্ষেত্রেও আইন ভঙ্গ করে পর পর চারবার ডিন হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। যা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সাথে সাংঘার্ষিক। সরকার আলী আক্কাস ২০১২ সালের ৯ মে থেকে ২০১৮ সালের ৮ মে পর্যন্ত ডিনের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে চতুর্থবার তাকে পুনরায় নিয়োগ দিলে ভুমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খ্রীষ্টিন রিচার্ডসনকে আইন অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০২০ সালের ১৫ জুন খ্রীষ্টিন রিচার্ডসনের মেয়াদ শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের দুই বিভাগে আরও তিনজন সহযোগী অধ্যাপক থাকার পরেও নিয়ম অনুযায়ী তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ না দিয়ে সরকার আলী আক্কাসকে আবারও চতুর্থবারের মতো ডিন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন বলেন, ড. আলী আক্কাসকে ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মত ডিন হিসাবে নিয়োগ দেয়ার সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি অবহিত করি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে ডিন হিসাবে নিয়োগ দেন।
এছাড়া আইন বিভাগে দীর্ঘদিন যাবত একজন অধ্যাপকের পদ ফাঁকা। চেয়ারম্যান ড. আলী আক্কাস বিভাগের নিজের একক আধিপত্য ধরে রাখতে অধ্যাপক নিয়োগের জন্য কখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চাহিদা দেননি। এ বিষয়ে বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষক বলেন, একজন চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন মেয়াদে থাকলে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়। তিনি জুনিয়র শিক্ষকদের মতামত অগ্রাহ্য করে একাই সিদ্ধান্ত নেন। নিজের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের পদন্নতিতে তিনি স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.সরকার আলী আক্কাস বলেন, ‘এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে প্রশ্ন করা ভাল। কারণ রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিতে নিয়োগ দেয়া হয়। তারা আইন কানুন দেখেই করে। এসব আমার সাথে ওরকম বলে লাভ নেই। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবেই আমাদের আইন আছে এবং এভাবেই চলছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়’। অধ্যাপকে শুন্য পদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এটি পূরণ করতে কয়েকবার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে কিন্তু জগন্নাথে কেউ আসতে রাজি হননি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী যেভাবে বলেছে আমি সেভাবে করেছি।’ এব্যপারে এর বেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি।