১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:১৫

পতাকা বিকৃতির ঘটনায় বেরোবি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা

বিকৃত পতাকা হাতে বেরোবির শিক্ষকেরা  © ফাইল ফটো

জাতীয় পতাকা বিকৃতির অভিযোগে বেগম রােকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শাখা ছাত্রলীগ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মাে. আরিফুল ইসলাম আরিফ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাজহাটায় থানায় মামলাটি করা হয়েছে। একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকেও পৃথক আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের মামলার এজহারের বলা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনসহ বেগম রােকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকরা জাতীয় পতাকার সবুজের মাঝে লাল বৃত্তাকার অংশটি গােলাকার বিকৃত করিয়া আয়তকার বানিয়েছে। পতাকা যেখানে উচ্চমুখি হইবে, সেখানে আসামীরা জাতীয় পতাকার অবমাননা করিয়া পতাকা নিম্নমুখি করে পায়ের নিচে ফেলিয়াছে মর্মে ৪নং আসামীর ফেসবুক পােস্ট প্রদান করেন। আসামীগন সেচ্ছায় স্বজ্ঞানে জাতীয় পতাকার বিধিমালার ব্যতয় ঘটাইয়াছেন।

এতে বলা হয়, অভিযুক্তদের করা ফেসবুক পোস্ট ছাত্রলীগের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের পক্ষ থেকে সেটির স্ক্রিনশর্ট ধারণ করা হয়। সংগঠনটির অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনার কারণে এজহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। এজহারে অভিযুক্তদের আইনগত শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

ছাত্রলীগের এজহারে অভিযুক্তরা হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মন, ভূগােল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শামীম হােসেন, ইতিহাস প্রত্নতত্ত বিভাগের শিক্ষক সােহাগ আলী, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর মাহামুদুল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাম প্রসাদ বর্মন, গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাইয়ুম। পিএস মাে. আমিনুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক স্বাক্ষরিত এজহারে বলা হয়েছে, বেগম রােকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর নির্দেশে গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের নির্দেশে ও ব্যবস্থাপনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৪ (২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে জাতীয় পতাকা বিকৃত ও উপস্থাপন করে অবমাননা করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষকদের নির্দেশে ও সরাসরি স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে জাতীয় পতাকা বিকৃত, উপস্থাপন ও সামাজিক যােগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছে। তারা জাতীয় পতাকার মাঝের রক্ত বর্ণের ভরাট বৃত্তটি পরিবতন করে বর্গাকাকার আকৃতির করে সংবিধানের ৪ (২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে।

এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকে উপস্থাপন করে সংবিধানের ধারা ৭ (ক) ভঙ্গ করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে এবং এমনকি তারা জাতীয় পতাকা মেঝেতে পায়ের নিচে স্পর্শ করিয়েছে যা জাতীয় পতাকা বিধি অনুযায়ী অপরাধ। তারা এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করেছে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের অভিযুক্তদের তালিকায় বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকেও সংযুক্ত করা হয়েছে। অপর অভিযুক্তরা হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আর এম হাফিজুর রহমান, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মন, ইতিহাস প্রত্নতত্ত বিভাগের শিক্ষক সােহাগ আলী, গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মোহা. রহমতুল্লাহ।

এদিকে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে বিজয় দিবস উদযাপনের ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদ। এক বিবৃতি সংগঠনটি বলেছে, ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বেগম রেকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর নির্দেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকাকে অবমানার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।