০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৫৯

ই-মেইলে কুবির ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষকদের হুমকি; থানায় জিডি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

ফেইক ই-মেইল থেকে এক শিক্ষার্থী ও তার বাবার পরিচয় ব্যবহার করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরে হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত দেড় বছরে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করেছেন বিভাগটির শিক্ষকবৃন্দ। গত ১ ডিসেম্বর তারা ২য় বারের মতো কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ মে থেকে বিভাগটির ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীর বাবার পরিচয় দিয়ে ২ টি ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে অন্তত ৭ বার বিভাগটির শিক্ষকদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে। শুরুতে asmaafiacoupharma@gmail.com আইডি থেকে শিক্ষকদের মেইলে হুমকি দেয়া হলেও গত ৯ নভেম্বর থেকে advsamadcumilla@gmail.com মেইল ব্যবহার করে শিক্ষকদের ও তাদের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই শিক্ষকরা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় জি.ডি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ করলে কিছুদিনের জন্য মেইল পাঠানো বন্ধ হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৬ জুন যে ছাত্রীর পরিচয় ব্যবহার করে মেইল করা হয়েছিল তিনি বিভাগটির প্রধানের কাছে তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়ে লিখিত দেন। তবে চলতি বছরের ৯ নভেম্বর থেকে আবারও ২য় মেইল থেকে হুমকি দেয়া শুরু হলে তারা ১ ডিসেম্বর ফের জিডি ও রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দেন। এছাড়া তারা পুলিশের সাইবার অপরাধ ইউনিটকেও অবহিত করেন।

মেইলগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালের ২৯ মে পাঠানো মেইলে বলা হয়, আমার মেয়ে ফার্মেসি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাবা হিসেবে আমি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই। এজন্য কত টাকা লাগবে আমাকে বলো। আমার রাজনৈতিক ক্ষমতা অনেক শক্ত। তুমি তাকে ৪ গ্রেড না দাও তবে ঈদের পর ফলাফল পাবে। এছাড়া মেইলগুলোতে শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়াসহ বিভিন্ন ফাঁদে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। তবে যে শিক্ষার্থীর পরিচয় ব্যবহার করে মেইল করা হয়েছে তিনি ও তার বাবা নিজেদের জীবন নিয়ে হুমকির মধ্যে আছেন বলে জানান।

ঐ ছাত্রীর বাবা আব্দুস সামাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ও আমার মেয়ের পরিচয় ব্যবহার করে কে বা কারা শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের জীবনও এখন হুমকির মধ্যে। গত বছর আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যারয় প্রশাসন যা বলবে আমরা তাই করবো।

ঐ ছাত্রী বলেন, ‘কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদেরকে ফাসানোর চেষ্টা করছে। যখন এনামুল স্যার চেয়ারম্যান ছিলেন তখন আমরা দরখাস্তও দিয়েছি। তখন তিনি আমাদের বলেছেন আর কিছু প্রয়োজন হলে জানাবেন। কিন্তু এখন আবার শুনছি ফের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাদের পরিবার খুব বিব্রতকর অবস্থায় আছি।

এসব হুমকি ধামকির ঘটনায় নিজেদের জীবন নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভাগটির শিক্ষকরা। বেশ কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। বিভাগটির প্রধান সৈয়দ কৌশিক আহমেদ বলেন, ‘আমরা এবং আমাদের পরিবার রীতিমতো বিব্রতকর ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছি। আমাদের সহকর্মী যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছেন তাদেরকেও হমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের পরিবার যেহেতু দেশে তারাও খুব আতঙ্কে রয়েছেন। আমরা গত বছর একটি জিডি করলেও আমরা কোন ফলাফল পাইনি যে কারা এটা করছে। এরপর গত ১ তারিখ আবারও আমরা জিডি করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও ঐ ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে আইনের সহায়তা নিয়ে এগুবো। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।’