ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতায় চাকরির আবেদনে ভোগান্তিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ  © ফাইল ফটো

চরম সেশনজট, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘ সূত্রিতাসহ নানান সমস্যার মুখোমুখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। চার বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্স সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অনেক বেশী। এরপর আবার স্নাতক শেষ বর্ষের ফলাফল না পাওয়ায় যোগ হয়েছে বাড়তি বিড়ম্বনা এবং ভোগান্তি।

যার দরুন স্নাতক শেষ করেও ফলাফল সমন্বয় না হওয়ার কারণে করতে পারছেনা কোন চাকরির আবেদন। যার ফলে চরম বিপাকে পড়েছে সাত কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী। অধিভুক্ত এসব কলেজের ২০১৪-১৫ সেশনের কয়েকটি বিভাগের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে  ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার আগেই। এরপর প্রায় এক মাস আগে এসব বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হলেও এখনও প্রকাশিত হয়নি ফলাফল। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারীতে ৷ ব্যবহারিক পরীক্ষাও শুরু হয়। তবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময় পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানালে তাঁরা কলেজটিকে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়। গত ২১ ও ২২ অক্টোবর তাঁদের ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষা শেষ হলেও এখনও মিলছে না ফলাফল। 

তবে সোহরাওয়ার্দী কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফলাফল ঐ দিনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ার আগে সাত কলেজের সমন্বয়ক জানিয়েছিলেন, শুধু সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়া বাকী ৬ টি কলেজের ফলাফল প্রস্তুত আছে। এটা শেষ হলেই ফলাফল প্রকাশ করা হবে। তবে ব্যবহারিক পরীক্ষা প্রায় এক মাস আগে শেষ হলেও ফলাফল এখন প্রকাশিত হয়নি।

এতে একই সাথে পরীক্ষা দিয়ে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফলাফল পেয়ে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে আবেদন করতে পারলেও উদ্ভিদবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা এই দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা পারছে না। এতে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে তারা।  

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা গত জানুয়ারীতে শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ফলাফল পাইনি। যেখানে ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার কথা সেখানে আজ বছর হতে চলেছে ৷ ফলাফল না পাওয়ায় কারনে বর্তমানে চলমান অনেক চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারছিনা।  আমরা এই চরম দূ্র্দশা থেকে মুক্তি চাই৷ যতদ্রুত সম্ভব আমাদের রেজাল্ট চাই। আমরা চরম হতাশা আর বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে রয়েছি। 

একই অভিযোগ করেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা সুলতানা। তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বছর হতে চললেও ফলাফলের দেখা মিলছে না। এমন অবস্থায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রচন্ড বিপর্যস্ত। কোন চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না আবার একাডেমিক কার্যক্রমেও চরম স্থবিরতা জীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের রেজাল্ট প্রকাশিত হোক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গুরুত্বসহকারে আমাদের এই বিষয়টি বিবেচনা করুন।

এসব বিষয়ে জানতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মোহসীন কবির এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কলেজের ব্যবহারিক পরীক্ষার না হওয়ার কারণে ফলাফল আটকে আছে এটা জানার পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্মতি প্রকাশ করলে গত ২১ ও ২২ অক্টোবর ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়ে ঐ দিনই ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করি দ্রুতই রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। 

শীঘ্রই ফল প্রকাশের আশ্বাস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, কবি নজরুল (সরকারি কবি নজরুল কলেজ) তাদের ভাইভা পরীক্ষা নিতে পারেনি। এটা চলতেছে, শীঘ্রই হয়ে যাবে। আমরা টপ প্রায়োরিটি দিচ্ছি। যেগুলো বাকি আছে শীঘ্রই হয়ে যাবে৷ 


সর্বশেষ সংবাদ