ববি ভিসির বছর পূর্তি— প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে যা বললেন শিক্ষার্থীরা
২০১৯ সালের এইদিনে (৩ নভেম্বর) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটকালীন সময়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. মো: ছাদেকুল আরেফিন। তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. ইমামুল হকের অপসারণের পর দীর্ঘদিন উপাচার্য নিয়োগ না দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যখন স্থবির পড়েছিল, ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, উপাচার্যসহ যখন গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদ শূন্য হয়ে পড়েছিল— ঠিক তখনই আলোকবর্তিকা রূপে এসেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: ছাদেকুল আরেফিন।
তাঁর কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। আজ মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) উপাচার্যের এক বছর পূর্তিতে শিক্ষার্থীদের সেই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির খাতাটা কতটুকু বিস্তৃত হলো শিক্ষার্থীদের অভিমতের মাধ্যমে সেটাই তুলে ধরা হলো। লিখছেন ববি প্রতিনিধি সোহেল রানা—
আনামুল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগ
২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর। অধ্যাপক ড. মো: ছাদেকুল আরেফিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে শিক্ষা, গবেষণা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেশনজট নিরসনের জন্য উপাচার্য প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০২০-২০২১ সালের বাজেটে গবেষণা খাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। শিক্ষকদের প্রমোশনের ব্যবস্থা করেছেন। সহশিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পর থেকে অন্যান্য ভিসির তুলনায় প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিনের কার্যক্রম এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ক্লাসরুম সংকট, সেশনজট কমাতে কার্যকর পরিকল্পনার অভাব, আবাসিক সংকট, পরিবহন সংকট, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই নেই, সেশন ফি এবং অন্যান্য ফি বেশি ইত্যাদি। তবে আশা করা যায় উপাচার্যের যোগ্য নেতৃত্বে উপরোল্লিখিত সংকটগুলো দূর করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে পারবেন।
শাহরিয়ার আহমেদ মিলান, অর্থনীতি বিভাগ
সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এস. এম. ইমামুল হকের অপসারণের পর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: ছাদেকুল আরেফিন আসার পর শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক বেশি। আজকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ১ বছর পূর্ণ হলো। সত্যি বলতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার সিকেভাগ ও পূরণ করতে পারেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি দাওয়া ছিল চাইলে তিনি এই এক বছরে অনেক কিছুই পূরণ করতে পারতেন। আশা রাখছি, তার বাকিটা সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দর করে সাজাবেন। করোনাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সব কাজগুলো শেষ করা যেত। আর একটা বিষয় ভেবেছিলাম আমাদের ক্যাম্পাসের জং ধরা প্রশাসন তাঁর হাতেই ঠিক হবে। কিন্তু উল্টো উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ এমন অবস্থাই আমাদের প্রশাসনের। বস্তুত এক বছরে উপাচার্য চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন, কেন করেন নি বা পারেননি সে প্রশ্ন স্যারের কাছেই থাকলো।আশা রাখছি তার বাকি সময়ে শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া গুলো শুনবেন এবং অতি সত্তর যা যা পূরণ করা যায় তা করবেন। তার কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বান্ধব একজন ভিসি হবেন, তিনি সেই আশাই রাখছি। স্যারের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
মো: উজির মোল্ল্যা ( রিতাজ), ইংরেজি বিভাগ
একটি সংকটময় পরিস্থিতে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: ছাদেকুল আরেফিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। তাঁর প্রথম কাজই ছিল স্থগিত হয়ে যাওয়া ভর্তি পরীক্ষা দ্রুত সময়ে নিয়ে নেয়া। তিনি সেটা সফলতার সাথে নিয়েছেন। ভর্তি কার্যক্রম শেষ হতে না হতে করোনার থাবা চলে এলো। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়েগেল। এক্ষেত্রে এই অল্প সময়ে তাকে মূল্যায়ন করা কঠিন বৈকি। তবে তাঁর কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আশা করছি তিনি শিক্ষার্থীদের দূ:খ কষ্ট বুঝবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য দূরপাল্লারজন্য বাস চালু করবেন। পরিবহন সংকট দূর করবেন এতে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে তিনি সুদৃঢ ভূমিকা পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক, প্রশাসনিক ভবনের সংখ্যা বাড়াবেন। শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড, প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল প্রদান করবেন। সর্বোপরি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আইকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
শামীম আহসান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ
নানা অনিশ্চয়তা, প্রতিকূলতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বরিশালের আপামর জনসাধারণের অগণিত প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন আমাদের অভিভাবক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: ছাদেকুল আরেফিন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে খুব বেশি সময় না পেলেও কিছু ইতিবাচক কাজ দৃশ্যমান হয়েছে, তারমধ্যে বঙ্গবন্ধু চেয়্যার প্রবর্তন, করোনাকালীন মানবিক সহায়তা, শেরে বাংলা হলে বঙ্গবন্ধু কর্ণার উদ্ভোদনসহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু প্রচেষ্টা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা ছিলো অনেক-সেশনজট দূরীকরণ, আমলাতান্ত্রিকতা দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক শিক্ষার্থী-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, অপ্রাসঙ্গিক জরিমানা ও ব্যয় কমিয়ে আনা, শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা, চলমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করাসহ নানা আকাঙ্খা। এ বিষয়ে তিনি কতটা প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।