ইসলাম নিয়ে কেন কটূক্তি করছেন শিক্ষার্থীরা— যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে এনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে এনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ  © টিডিসি ফটো

ইসলাম ধর্ম এবং ইসলামের শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কটূক্তি করার অভিযোগে গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে শাস্তিস্বরূপ সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ধরনের অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানায়।

সর্বশেষ, আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান রোমানকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেসবুকে মহানবী (সাঃ)-কে কটূক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক হতে শুরু করে প্রাক্তনদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করার জন্য জোর আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারই প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে, কোন গােষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস-কমেন্ট করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্মের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে না পারা এবং প্রযুক্তি ও স্মার্টফোন সহজলাভ্য হওয়াতে বিষয়গুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্মকে যারা বুঝতে পারে তারা কখনও কটূক্তি করবে না। এটা রোধে ধর্মের প্রচার-প্রচারণাকারীদের সঠিকভাবে ধর্মের ব্যাখ্যাটা উপস্থাপনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফারসি বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ধর্মকে যথাযথ বুঝতে না পারায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে দেখা যায়, কেউ হঠাৎ করে ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে ফেলে। তাছাড়া ধর্মের প্রচারক ও অথরিটি যাদেরকে আমরা মনে করি তারাও ধর্মের সঠিক সুন্দর এবং শান্তির ব্যাখ্যাটা যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে নানাভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ ব্যর্থতার পেছনে গোষ্ঠীগত স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ ঐতিহ্যগত কিছু স্বার্থ রয়েছে। যে কারণে এই অবস্থাটা তৈরি হচ্ছে। মূলত ধর্মের শান্তির বাণী যারা বুঝতে পারে, ধর্ম যারা বুঝতে পারে তারা কখনও ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি করবে না।

এ থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদেশে হাজার হাজার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার যারা শিক্ষক তাদের প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাদেরকে প্রকৃত মানুষ গড়ার দায়িত্ব শতভাগ ধারণ করতে হবে। শিক্ষকরা যদি তাদের দায়িত্বে অটুট থাকে তাহলে এই ছাত্ররা কোনদিনও নীতি-নৈতিকতা অথবা অন্যকে আঘাত দিয়ে কোন মন্তব্য করবে না।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) কু’রআনিক সাইন্সেস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ মঈন উদ্দীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,  এ বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি উপরই নির্ভর করে। ব্যক্তি কোন পরিবেশে বড় হয়েছে সেটি বড় কথা। তাছাড়া বর্তমানে প্রযুক্তি ও স্মার্টফোন সহজলাভ্য হওয়াতে ধর্মের পক্ষে এবং বিপক্ষে উভয় দিকে মানুষ ঝুঁকছে। তাই বিষয়গুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তার মতে, প্রযুক্তি আসলে ছুরির মতো, যে যেদিকে কাটতে পারে। এটা দিয়ে যেমন ভালো কাজ করা যায়। তেমন খারাপ কাজও করা যায়। 

ড. মোহাম্মাদ মঈন উদ্দীন বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণের বর্তমান প্রজন্ম সবকিছু বেশি জানে। আমরা ছোটবেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি বাসার মধ্যে থাকা বিভিন্ন বই-ম্যাগাজিন পড়তাম। এখনতো প্রযুক্তির কারণে সবাই সবকিছুই জানতে পারছে। তারা নানান দেশের সাংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এজন্য দুটোই হচ্ছে- ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে, আবার বিরুদ্ধেও যাচ্ছে। এজন্য পরিবেশকেই দায়ী করছেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, একটা সময় ধর্মের পক্ষে ও বিপক্ষে যেসব আলোচনা হতো তা অনেকে কাছে পৌঁছাতো না। কিন্তু আজকাল প্রযুক্তির কারণে মোবাইলে সব পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে কেউ ইসলামের দিকে ঝুঁকছে, কেউ আবার কোন কিছুই করছে না; আর কিছু অংশ বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তবে তারা হাতেগোনা মাত্র।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সম্প্রতি ফ্রান্সের ঘটনায় কারও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ কেউ বাকস্বাধীনতা বলছে। তাদের তেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি  হচ্ছে না। বিষয়টি এমনই।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন প্রতিক মজুমদার ও দীপ্ত পাল পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং বাংলাদেশ সরকারের আইন মোতাবেক দন্ডনীয় অপরাধ করায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় হতে সাময়িক বহিষ্কার করা হল। এর আগে মঙ্গলবার তাদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরের দিন বুধবারও শিক্ষার্থীরা একই দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।

গত ২৬ অক্টোবর (সোমবার) ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী তিথী সরকার সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। জবি থেকে এক আদেশে বলা হয়,  হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে সর্ম্পকে কটূক্তি করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় জবি-২০০৫ আইন এর ধারা ১০(১১) এর উপাচার্যের ক্ষমতাবলে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হল। এর আগে তিথি সরকারের বিভিন্ন মন্তব্য ও ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে তা থেকে তীব্র সমালোচনার শুরু হয়। এক পর্যায়ে জবি শিক্ষার্থীরা তার স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। 

ফেসবুকে সনাতন ধর্মের দেব-দেবী নিয়ে কটূক্তি ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী শাকিল হাওলাদারের ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর (শনিবার) যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষেডিনস কমিটি, শিক্ষক সমিতি ও কর্মকর্তা সমিতি ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ