ভালো নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও কান্নারত শিক্ষার্থী
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও কান্নারত শিক্ষার্থী  © ফাইল ফটো

শাম্মী আখতার। উত্তরা উইমেন্স কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। গত বছরের শেষ দিকে শুরু হওয়া অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পাঁচটি পরীক্ষা শেষ করেন। তবে করোনার প্রকোপ শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় পরীক্ষা। দীর্ঘ সাত মাস হলেও বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো শেষ হয়নি তার। পরীক্ষা না হওয়ায় রেজাল্টও হয়নি। ফলে কোনো ধরনের চাকরির আবেদন করতে পারছে না সে। এই অবস্থায় দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি তার।

শুধু শাম্মীই নয়; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ পরীক্ষার্থীর একই অবস্থা। দীর্ঘদিন পরীক্ষা না হওয়ায় মানসিক অবসাদে ভুগছেন তারা। পরীক্ষা শেষ করতে না পরায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাকরির আবেদন মিস হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রেজাল্ট প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, পাঁচটি বিষয়ে নেয়া পরীক্ষার উপরই রেজাল্ট দেয়া অথবা অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল দেয়া হোক।

এদিকে পাঁচটি বিষয়ের উপর হয়ে যাওয়া পরীক্ষার ভিত্তিতে রেজাল্ট প্রকাশ করতে রাজি নয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা যে দাবি জানাচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কেননা অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় ভাইভার বিষয় জড়িত। হয়ে যাওয়া পরীক্ষার উপর ফলাফল দেয়া হলে সেটি শিক্ষার্থীদের জন্যই ক্ষতি বয়ে আনবে। কেননা এই সার্টিফিকেট দিয়ে তারা চাকরির বাজারে আবেদন করতে পারবেন না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অবশিষ্ট পরীক্ষা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজনের চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত একটি সফটওয়্যার ব্যবহারের চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি অনুমোদন দিলে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবি করছে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। পাঁচটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে না। এটি করলে শিক্ষার্থীরা সেই সার্টিফিকেট দিয়ে কিছুই করতে পারবে না। এই সার্টিফিকেট নিলে তারাই বিপাকে পড়বে। আমরা বিকল্প উপায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বাকি থাকা পরীক্ষা শেষ করার বিষয়ে আলোচনা করছি।

তিনি আরও বলেন, ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীদের অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো ভার্চুয়াল মাধ্যমে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে ইউজিসিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইউজিসি এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে নেয়া হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের আরো ধৈর্যের পরিচয় দেয়ার আহবান জানান তিনি।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে উপাচার্যদের পক্ষ থেকে ইউজিসির চেয়অরম্যান স্যার বরাবরা একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও উপাচার্যদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা স্থগিত থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, করোনার মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়া হয়েছে। বড় বড় পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ সার্টিফিকেটের অপেক্ষায় থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ পরীক্ষার্থীকে করোনার দোহায় দিয়ে কালক্ষেপন করা হচ্ছে।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী তাসফিয়া তাবাসসুম বলেন, আমাদের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শুরুর পর প্রায় এক বছর হতে চলল। অথচ এখনো পরীক্ষা শেষ করতে পারলাম। ভাইভা আর রেজাল্ট দিতে দিতে কত সময় লাগবে কে জানে। শুধু আমরাই না বিভিন্ন বর্ষে পরীক্ষা দিয়েও দীর্ঘদিন ধরে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেক শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজাল্ট ঘোষণা না হওয়ায় চাকরির আবেদন করতে পারছি না।

রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, করোনার মধ্যে দেশের সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু আমাদের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। পরীক্ষা না নিলে অটোপাস দিয়ে আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়া হোক। এভাবে কালক্ষেপনের কোন মানে হয় না। রেজাল্ট না হওয়ায় চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছি। অনলাইনে পরীক্ষা বিষয়েও কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। আমাদের অপেক্ষার প্রহর কতদিনে শেষ হবে তার কোনো ঠিক নেই। দ্রুত পরীক্ষা সম্পন্ন করে রেজাল্ট দেয়া হোক। না হলে অটোপাস দেয়ার দাবি জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ