‘সুশাসনের ঘাটতিই টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জ’

বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উপলক্ষে ‘টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা
বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উপলক্ষে ‘টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা  © টিডিসি ফটো

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত, খাদ্য ও পুষ্টি সংকট বৃদ্ধির পাশপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। সাথে বাড়তি দুর্যোগ হিসেবে যোগ হয়েছে আম্পান ও বন্যা। অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রেই শুধু আমাদের দেশে নয় পৃথিবীব্যাপী এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

সামগ্রিক অর্থে দারিদ্র্যহ্রাসকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার এখনই উপযুক্ত সময়। সবিমলিয়ে উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হলেও সরবারহ ব্যবস্থার সমস্যা, যথাযথ মনিটরিং এর অভাব এবং সর্বোপরি সুশাসেনর ঘাটতি কারনে দেশের টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ বিষয়সমূহ উঠে আসে।

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ (পিকেএসএফ) এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় এর সচিব ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা। বিশেষ অতিথি হিসাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আরিফুর রহমান অপু এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন ইকো কোঅপারেশন বাংলাদেশ এর হেড অফ প্রোগ্রাম আবুল কালাম আজাদ। সভায় আলোচনাপত্র পাঠ ও সঞ্চালনা করেন নেটওয়ার্ক-এর সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম বলেন, “বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির তুলনায় উৎপাদন যথেষ্ট ভাল হলেও সরবারহ ব্যবস্থার সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। রয়েছে মনিটরিং সমস্যা। সর্বোপরি সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলে বছরব্যাপী দরিদ্র মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ফুড প্যাকেজ অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, উন্নয়ন মানে রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ কালভার্টের কেবল উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন মানে সামাজিক উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যোর উন্নয়ন আর মানবিক উন্নয়ন।”

বিশেষ অতিথি মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, “বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সকল ক্ষেত্রেই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি সাথে ৫ দফা’র বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি মোকাবেলায় কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বদা সচেষ্ট থেকে বীজ, সার, নগদ অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে। এছাড়া বাড়ি ভিত্তিক পুষ্টি বাগান, কৃষির ম্যাকানাইজেশন বিষয়েও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে মধ্যসত্ত¡ভোগীদের ভ‚মিকা নির্মূল করতে হবে। সর্বোপরি তিনি তাঁর বক্তব্যে, সকলের বিশেষ করে খাদ্য অধিকার নিশ্চিতে পুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে আইন করার ব্যাপারে মতামত দেন।”

ড. নাজনীন আহমেদ, আলুর দামবৃদ্ধির উদাহরন দিয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেন, শুধুমাত্র খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করলেই হবে না পণ্যের যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থার পাশাপাশি সরবারহ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। যা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী আয়েও ভূমিকা রাখবে।

আবুল কালাম আজাদ শষ্য বীমা, আর্থিক প্রণোদনা, জলবায়ু মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেন।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সরকারের একার পক্ষে কিছু সম্ভব নয়। সকলকে সাথে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও এনজিওদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নের বহুমাত্রিকতাকে বিবেচনায় নিতে হবে। উন্নয়ন হতে হবে মানব কেন্দ্রিক। সরকারের বিভিন্ন নীতি- আইন এবং উদ্যোগ ভালো হলেও রয়েছে বাস্তবায়নের সমস্যা। যেটা প্রণোদনার ক্ষেত্রেও লক্ষনীয়। বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত ধীরগতি।

আলোচনাপত্র উপস্থাপনকালে মহসিন আলী বলেন, একদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে অপরদিকে বেশিরভাগ খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রায় সকল খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারি আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে এ বিষয়ে হয়তো বিশেষ খাদ্য-পুষ্টি কর্মসূচি নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এ প্রেক্ষিতে দরিদ্র মানুষের জন্য যেমন সরকারের বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন পাশাপাশি সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি উপরোক্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়িত হলে করোনার সংক্রমণ থেকে মানুষ বাঁচবে পাশাপাশি দরিদ্রসহ সকল স্তরের মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও টেকসই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের এর ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ