ছাত্র আন্দোলনে ‘উস্কানি’: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষককে শোকজ
ছাত্র আন্দোলনে ‘উস্কানি’ দেয়ার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) তাদের শোকজ করা হয় এবং তিনদিনের মধ্যে জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন, বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী, বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম ও ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রভাষক আয়েশা রহমান আশা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই শোকজ পত্রে বলা হয়েছে, গত ২ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে উপাচার্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ভীতিকর পরিস্থতি তৈরি করে। যা বে-আইনি, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত। উক্ত বিষয়ের সঙ্গে আপনাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তথ্যমতে, গত বছরের ১৩ নভেম্বর আবাসন সংকটের তীব্রতা, ন্যূনতম মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসন বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলে ১ জানুয়ারি ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারী প্রতিবেদন দিয়েছে। তারপর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে এতদিন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে এ বিষয়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করার সুপারিশ করলেও সে সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব পত্র প্রেরণ করেছে বলে শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বলেন, কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়া এবং শিক্ষকদের বক্তব্য না নিয়েই রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত পত্রে সকলের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে, এ বিষয়ের সাথে আপনার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়া সরাসরি এ ধরনের সিদ্ধান্তে আসা, প্রশাসনের দূরভিসন্ধিরই অংশ।
এ বিষয়ে শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান ও শিক্ষক ইমরান কামাল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গিয়েছি, সহমত পোষণ করেছি, এর পর চলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের দাবি সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের ছিল। তাই আমরা সেখানে সমর্থন প্রদান করেছি। এজন্য, আমাদের মধ্য থেকে মাত্র চারজন শিক্ষককে শোকজ করাটাকে আমাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দূরভিসন্ধিমূলক বলে মনে হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অচিরেই এ পদক্ষেপ থেকে সরে আসবে, আমাদের চারজন সহকর্মীর কাছ থেকে হয়রানিমূলক এ পত্র অবিলম্বে প্রত্যাহার করবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ এসেছে। এ হয়রানির অভিযোগ থেকে মনোযোগ ভিন্নখাতে সরাতে এবং স্মরণকালের সবচেয়ে বড় নিয়োগ (১৫০ টি পদে) নিয়োগ দেয়ার পথকে সুগম করতেই এ সিদ্ধান্ত বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন।