শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে যেসব যুক্তি শিক্ষার্থীদের
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনাকালে শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে চলছে টেলিভিশনে পাঠদান। আর উচ্চশিক্ষায় পাঠদান চলছে অনলাইনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা সংকটের আবর্তে পড়েছে এ দূরশিক্ষণ কার্যক্রম। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর কাছেই পৌঁছাচ্ছে না টেলিভিশনের পাঠদান। অনলাইনের পাঠদানেও একই অবস্থা।
এদিকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি চলমান রয়েছে। শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকলেও দেশের সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এমনটিই দাবি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের একাংশের। সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে রাজপথে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাদের একটি গ্রুপকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। তাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের একটি কমিটি আগামী ১৭ অক্টোবরের মধ্যে স্কুল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এসব দাবি আর কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের যুক্তি জানতে চেয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এবং বন্ধ রাখার বিষয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা তাদের যুক্তি তুলে ধরেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, দেশের সব অফিস শিল্পকারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। কোনো স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই হাট-বাজারে মানুষ চলেফরা করতেছে। মাহমুদলের প্রশ্ন, তাহলে সব করোনাভাইরাস কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে! ১ম শ্রেণি থেকে এইসএসসি অটোপাস। যারা স্নাতকে আছে তাদের কি হবে ভেবে দেখেছেন? আমরা ইতোমধ্যে এক বছরের সেশনজটে পড়ে গেছি। এসব বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তাসনিয়া তাহসিন সাফি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে মোবাইল আর এম্বি দিয়ে সাময়িক লোভ দেখানো হয়েছে। অনলাইন ক্লাসের অভ্যন্তরীণ চিত্র হলো একদম অপরিকল্পিত অনলাইন ক্লাস ও বেশীরভাগ শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা। শিক্ষাখাতকে রাজনীতির অংশ না বানিয়ে অবিলম্বে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তাহসিন সাফির মতে, শিক্ষাজীবনের ১২টি বছর পার করে এসেও যদি স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে পালন করতে হয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জানে না বলে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, তাহলে বলতে হয় পুরো উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় আছে।
মো. রুবেল মোল্লা নামে এক শিক্ষার্থী বলেছেন, বাংলাদেশের সব কিছু আগের মতোই চলছে। শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশের গার্মেন্টস, সিনেমা হল, নাট্যকলা, জেলা জর্জ কোর্ট, হাইকোর্ট, মাদ্রাসা সবকিছু চলছে। কিন্তু কোথাও ঠিক মতো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এসব সেক্টরে স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। পাশাপাশি সরকারের কাছে অনুরোধ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন।
শুধুমাত্র খুলে দেয়ার পেছনে নয়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পেছনেও যুক্তি রয়েছে শিক্ষার্থীদের। চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজ শিক্ষার্থী রায়হান হোসাইন বলেন, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময় হয়নি। অধিকাংশ জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে স্বাস্থ্য বিধি মানা সম্ভব নয়।
রায়হানের মতে- গণরুম, আবাসিক হলে গাদাগাদি অবস্থা। অন্যদিকে ক্লাসে গেলেও গাদাগাদি অবস্থা। এখন খুলে দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনের জন্য ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া সামনে শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষেই মত বিশিষ্টজনদের। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাটা ভুল হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক থেকে শারীরিক নানা সমস্যা হচ্ছে। আমাদের অনেক ছেলে মেয়ে ঝড়ে পড়ছে। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া দরকার। প্রয়োজনে দুই শিফটে ক্লাস পরিচালনা করা যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া উচিত।
এদিকে স্কুল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছে কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৭ অক্টোবরের মধ্যে স্কুল খুলে দেয়ার দাবি তাদের। দাবি না মানলে আগামী মাসের প্রথম দিনেই আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
জাতীয় কমিটির আহবায়ক মো. মিজানুর রহমান সরকার বলেন, ‘আর্থিক অনটনে পড়ে ইতোমধ্যে ১৪ জন শিক্ষক হৃদরোগ, আত্মহত্যাসহ নানা কারণে মারা গেছেন। অধিকাংশ স্কুল ভাড়া বাড়িতে অবস্থিত হওয়ায় ভাড়ার চাপে হাজারো স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা মানবেতর জীবন থেকে উত্তরণে কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করছেন। এটা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সংকেত।
কমিটির নেতারা বলেন, ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হলো। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিন্ডারগার্টেন স্কুল খুলতে সমস্যা কোথায়? দেশে এখন করোনা সংক্রমণের মাত্রাও অন্য সময়ের তুলনায় অনেক সহনীয়। তাই ১৭ অক্টোবরের মধ্যে স্কুল খোলার ঘোষণা দিতে হবে।