অনিয়মের অভিযোগে ডিন পদে পদোন্নতি স্থগিত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌসের অধ্যাপক পদের শর্তপূরণ না করে পদোন্নতি ও ডিন পদ নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।
জানা গেছে, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির ১১৮তম সভায় ওই শিক্ষিকার পদোন্নতির বিষয়ে শর্তপূরণ না করায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি সেই সময়ের বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামালের সভাপতিত্বে হওয়া প্ল্যানিং কমিটি।
পরবতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম সিন্ডিকেট সভায় প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত আমলে না নিয়েই ওই শিক্ষিকাকে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং ৭০তম সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্যের পছন্দ অনুযায়ী বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম ডিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয় একই শিক্ষিকাকে (ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌসকে)।
সিএসই বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা পদোন্নতি নিয়ে অভিযোগ তুলে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ৭১তম সিন্ডিকেট সভায় জান্নাতুল ফেরদৌস এর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ঠিক আছে কিনা তা তদন্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং সেই সাথে স্থগিত করা হয় ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌসের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদ।
উক্ত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেন তালুকদার। সদস্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. একে এম জাকির হোসেন এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপক হতে ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌসের করা আবেদনে প্রকাশনা ও অতিরিক্ত দায়িত্বের রেয়াতে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। পদোন্নতি গ্রহণ করতে হলে প্রকাশনা ও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের প্রত্যেকটির জন্যে একবার রেয়াত প্রাপ্ত হবেন কিন্তু ওই শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক থাকা অবস্থাতেও অতিরিক্ত দায়িত্বের রেয়াত যুক্ত করে পর্যায়ন্নোয়নের জন্যে আবেদন করেন।
পরবর্তীতে সেই দায়িত্বের রেয়াতই অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্যে আবেদন করেন। যা নিয়ম অনুযায়ী তিনি সেই রেয়াত যুক্ত করতে পারেন না বিধায় অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির জন্যে সকল শর্ত পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে একই বিভাগে অধ্যাপক পদধারী অন্য শিক্ষকরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই আবেদন করেছি। তবে পূর্বে পর্যায়ন্নোয়নের জন্যে দায়িত্বের রেয়াত আবেদন স্থগিত করতে আবেদন করেছিলাম যার প্রশাসন কতৃক অনুমোদনের দলিল হয়তো বর্তমানে আমার কাছে নেই কিন্তু সব নিয়ম ঠিক রেখেই আমি অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্যে আবেদন করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তা অনুমোদন দেয়।
হঠাৎ করে এই অভিযোগ আমলে নিয়ে আমায় দেয়া ডিন পদ স্থগিত করা আমার জন্যে মানহানিকর। যদি আমার আবেদনে ত্রুটি থাকতো তাহলে প্রশাসন কেন পূর্বেই তা স্থগিত করলো না? কি এমন হলো যে ৬ সিন্ডিকেট সভা পর এসে অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে অনিয়মের জন্যে তদন্ত কমিটি করা হলো সেই সাথে ডিন পদেও স্থগিত করা হলো?
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল বলেন, আমরা প্রশাসনকে বলেছি অধ্যাপক পদে ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌসকে পদোন্নতি দেয়া হলে তা কি নিয়মবহির্ভুত হয় কিনা সেটা পর্যালোচনা করতে। আর বিজ্ঞান অনুষদে ডীন পদে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে সেটা প্রথমে আমার প্রাপ্য। পরবর্তীতে জেষ্ঠ্য অন্য শিক্ষকও রয়েছে কিন্তু তাদের কাউকেই দায়িত্ব প্রদান করেনি বিশ্ববিদ্যালয়।
ডিন পদে নিয়োগ নিয়ে ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এটা ঠিক যে আমার থেকে জেষ্ঠ্য শিক্ষক এই পদে আসতে পারতেন কিন্তু এ ও লক্ষ্যণীয় যে উপাচার্য কাজের সুবিধার্থে তার পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে সেই পদের দায়িত্ব প্রদান করতে পারেন। আমাকে তিনিই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। কিন্তু সব থেকে অবাক করা বিষয় হলো যেখানে সহযোগী অধ্যাপক থাকলেই ডিন হওয়া যায় সেখানে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বিষয় সামনে এনে ডিন পদ স্থগিত করে একরকম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এমন অভিযোগের বিষয় নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, পদোন্নতির সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট। আগামী দুই থেকে তিনদিনের ভিতর সেই সিদ্ধান্তের নথিপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেবে তদন্ত কমিটি। খুব দ্রুতই তদন্ত শেষ হবে।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি একা কোন সিদ্ধান্ত নেই না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, কমিটি বা ফোরামের মাধ্যমে নেয়া হয়। তেমনি ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌসকে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া এবং অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন সেটিও ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। আমি প্রত্যাশা রাখি বিষয়টির সুষ্টু সুন্দর সমাধান হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির ভাবনা কি জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন- এগুলো প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। আমরা কোন সিদ্ধান্ত দেই না।
উল্লেখ্য, সহযোগী অধ্যাপক পদ থেকে পদোন্নতি পেতে প্রয়োজন ১২ বছরের অভিজ্ঞতা। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্যে সহযোগী অধ্যাপক অবস্থায় ৪টি ও পূর্বের ৪টি প্রকাশনা মিলিয়ে ৮টির পর প্রত্যেক ৩টি প্রকাশনার জন্যে ১ বছর ও ৬টির জন্যে সর্বোচ্চ ২বছর রেয়াত প্রাপ্ত হবেন।একই পদে থাকা অবস্থায় প্রকাশনার বরাতে পুনরায় রেয়াত প্রাপ্ত হবেন না। কোন নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কেবলমাত্র একবার রেয়াত পাওয়া সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, সেই অনুষদ ভুক্ত বিভাগগুলোর মধ্যে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক পর্যায়ক্রমে ডিন এর দায়িত্ব পাবেন। যদি অধ্যাপক পদধারী শিক্ষক না থাকেন তবে জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ডিন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।