যবিপ্রবির হলে একের পর এক চুরি, দায় নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একমাত্র ছাত্র হল শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে কম্পিউটার চুরির তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই একাধিক চুরির ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হওয়ার ঘটনায় হল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা পরস্পরকে দায়ী করে আসছেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীর শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৪১৪ নং রুম থেকে কম্পিউটার চুরি হয়। চুরির বিষয়ে তদন্তে সহকারী প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন চৌধুরীকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি চোরের কোন তথ্য। এছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই উঠেছে বেশ কয়েকটি নতুন চুরির অভিযোগ।
এদিকে হলের শিক্ষার্থীরা না ফেরা পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা সম্ভব হছে না মোট চুরি যাওয়া জিনিসের পরিমাণ। অন্যদিকে চুরির বিষয়ে দায় নিতে অস্বীকার করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।
চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে প্রত্যেকটি চুরি একইভাবে করা হয়েছে। চোর পেছনের বেলকুনি দিয়ে পিছনের দরজা খুলে চুরি করেছে এবং ভিতর থেকে সামনের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। রহস্যজনক বিষয় যেকয়কটি রুমে চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রত্যেকটিতে চোর বেছে বেছে কিছু জিনিস নিয়ে গেছে।
২য় তলার কিছু রুম থেকে প্লাস্টিকের রেক চুরি করেছে কিন্তু অন্যান্য ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য নেয়নি। ৩২৪ নং রুমের স্ট্যান্ড ফ্যান চুরি করেছে কিন্তু অন্য কিছু নেয়নি। এছাড়াও ৪১৩ নং রুমে একটি ছোট আলমারির তালা ভেঙে কিছু জিনিসপত্র, জামাকাপড় ও নতুন একটি গিটার চুরি করে নিয়ে গেছে।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী ৪১৩ নং রুমের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, হলের শুধু আমার রুম নয় একাধিক রুমে চুরি হয়েছে এবং এটিকে চুরি নয় ডাকাতি বলে। যেসব জিনিসপত্র নেওয়া হয়েছে এবং যতগুলো জিনিস নেয়া হয়েছে সেগুলো নেয়ার জন্য নিশ্চই কোন বড় ট্রাক লড়ি নিয়ে এসেছিলো ডাকাত দল। কিন্তু দূর্ভাগ্য হল প্রশাসন কিছুই নাকি জানে না এবং দায়ভার শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
চুরির বিষয়ে হল প্রভোস্ট ড. নাজমুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চুরির ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি চুরি রোধে আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছে আমরা এইগুলো বাস্তবায়ন করছি। ইতোমধ্যেই আমরা হলের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছি, হলের পিছনে সার্চ লাইট লাগিয়েছি এবং প্রতিটি তালার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা হবে।
তিনি জানান, এরমধ্যে হলে চুরি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সকল বাবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। যেহেতু হল বন্ধ ঘোষণার সময় নোটিশের মাধ্যমে আমরা সকল শিক্ষার্থীকে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যেতে বলেছি সেক্ষেত্রে এই দায়ভার হল প্রশাসনের না। তারা তাদের মূল্যবান জিনিসগুলো আমাদের অবহিত না করেই রুমে রেখে গেছে এটা তাদেরই ভুল।
ড. নাজমুল হাসান আরও জানান, আমারা আমাদের দায়িত্ব অবহেলা করিনি, হলের নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি গার্ড ছিল, হল অফিস খোলা ছিল এরপরেও চুরির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেসকল শিক্ষার্থীরা চুরির অভিযোগ করেছে তাদের আবেদন ও তালিকা আমাদের কাছে আছে যদি কোন সুযোগ থাকে তাহলে তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টা বিবেচনা করা হবে।
এর আগেও করোনাকালীন সময়ে যবিপ্রবির ছাত্র হলে ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি যাতে ভবিষ্যতে এই রকম ঘটনা না ঘটে। এছাড়াও যেখানে করনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ করতে গেলে বিভিন্ন ফর্মালিটিস মেনে প্রবেশ করতে হয় এবং হলের নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত ২৬ টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওয়াতাভুক্ত সেখানে এই ধরনের ঘটনা একান্তই কাম্য নয়।
ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের নির্বিকারতা ও নিরাপত্তা প্রদানে অপারগতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, চলছে আলোচনা সমালোচনা সহ বিরূপ মন্তব্য। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতি পূরণের দাবি করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।