সহপাঠী ও স্বজনদের চোখে যেমন ছিলেন তিন্নি
- রেদওয়ান রাকিব, ইবি
- প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২০, ১২:১১ PM , আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০, ০১:৪২ PM
উলফাত আরা তিন্নি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। দেশ সেবার ব্রত নিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তিন্নির রহস্যজনক মৃত্যুতে স্বপ্ন থমকে গেছে।
তিন্নি অমায়িক, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ মানুষ ছিলেন। এছাড়া তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এমনটিই বলেছেন তার সহপাঠী ও স্বজনরা। তিন্নির বড় বোন মুন্নী বলেন, ‘বোন হারানোর বেদনা আরেক বোনই বোঝে। তিন্নির কথা মনে পড়লে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। কারো বোন যেন এভাবে অকালে হারিয়ে না যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার বোন অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র ছিল। ওর সাথে আমার খুনসুটির সম্পর্ক ছিল। তার বিষয়ে বলতে গেলে সে একজন অমায়িক মানুষ। আমার বোনকে এত তাড়াতাড়ি হারাতে হবে তা কখনো ভাবিনি।’
তিন্নির বন্ধু তাহসিন বলেন, ‘তিন্নি সর্বদাই হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত ও ভাল মনের মানুষ ছিল। বন্ধু হিসেবে তিন্নিকে না পেলে হয়তো বন্ধুর সংজ্ঞাটা অগোচরেই থেকে যেত। সবসময় সহযোগিতাপূর্ণ ছিল।’ বিভাগের সকল কাজে তিন্নি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালন করত বলেও জানিয়েছেন তাহসিন।
তার আরেক সহপাঠী তামিম হোসেন- তিন্নি ‘হত্যার’ বিচার দাবি করে বলেন, ‘বন্ধুত্ব শব্দটাই যেন মনের নীল আকাশে ডানা মেলে উড়তে থাকা স্বপ্নঘুড়ির মত। কথায় কথায় আঙুলে আঙুল ঠেকিয়ে ভাব নেয়া আর আড়ি কাটার সেই অমলিন বন্ধুত্ব। শুধু আছে আদি অকৃত্রিম ভালোলাগার আত্মিক টান। তিন্নি এমনই একজন খুব কাছের বন্ধু ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সে একজন অমায়িক মানুষ। তার সাথে সবার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ওর সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ হবে না। আর তো তিন্নির সাথে আড্ডা দিতে পারব না। তিন্নির এ ঘটনার পিছনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। যেন এমন বন্ধু যেন আর অকালে না হারতে হয়।’
তিন্নির সহপাঠী সোহেল বলেন, ‘এভাবে তিন্নি হঠাৎ হারিয়ে যাবে এ কল্পনাতীত ছিল। কয়েকদিন আগেও যার সাথে কথা বললাম, এখন সেই তিন্নি পরপারে। তিন্নির স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেল। মৃত্যু হলো একটি স্বপ্নের। বন্ধু হারানোর বেদনা কতটুকু তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তিন্নি আর নেই আমাদের মাঝে।’
তিনি বলেন, ‘এমনভাবে কেউ যেন হারিয়ে না যায়। আজ তিন্নি হারালো, কাল আরেক সহপাঠী কিংবা আমার পরিবারের কেউ এভাবে লাঞ্ছিত হবে না এর নিশ্চয়তা কী?’
এর আগে তিন্নি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেন তার সহপাঠীরা। এছাড়া গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসাথে বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন্নির শয়ন কক্ষ থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে শৈলকূপা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত তিন্নীর মা হালিমা বেগমের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে আট জন আসামীর মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী জামিরুলসহ চার জন্য পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।