দেড় বছর ধরে কমিটি নেই জবি ছাত্রলীগের
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি নেই। সম্মেলনের এক বছরও পার হয়ে গেলেও এখানে কমিটি দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদেরকে কমিটি হবে বলে আশ্বাস দেয়া হলেও সে গুঞ্জন আর আলোর মুখ দেখে না। এতে নান জটিলতায় পড়তে হচ্ছে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিনের সম্ভাব্য নেতামকর্মীদের।
করোনার কারণে চলতি বছরের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেন। মানুষের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণসহ নানাবিধ কাজে অংশগ্রহণ করেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ করেন। তারপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ঘোষিত সকল কর্মসূচি পালন করে আসছে। এর বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়ার সমস্যা সমাধানে সরাসরি কাজ করেছেন। যা এখনো অব্যাহত আছে।
তবে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় অধিকাংশ পদপ্রত্যাশীদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে। এমনকি সরকারি চাকরি মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চলেছে । যেকারণে পদপ্রত্যাশীরা এক ধরনের দোটানা অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। না পারছে ছাত্ররাজনীতি ছাড়তে, আবার না পারছে চাকরি করতে। তবুও অনেক পদপ্রত্যাশী শীর্ষ দুই পদের আশায় এখানো রাজনীতিতে সক্রিয় আছে।
জবি শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর এফএম শরীফুল ইসলামকে সভাপতি ও এস এম সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে জবি ছাত্রলীগ কমিটি করা হয়। ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই শরীফ-সিরাজ ১৯৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ প্রথম সম্মেলনের পর শরীফ-সিরাজ কমিটির বিলুপ্তি ঘটে। এর পরে দীর্ঘ ছয় মাস পরে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তরিক-রাসেল কমিটি দেড় বছর অতিবাহিত করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুইবার স্থগিতাদেশের পর ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ আবার দুপক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। একই বছরের ১৯ মার্চ তরিক-রাসেল কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে শাখা ছাত্রলীগের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান। তারপর চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারী ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পান। তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নেয়ার নয় মাস পরও শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের ভাগ্য ফেরেনি। অথচ কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে এ পর্যন্ত পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা হন্নে হয়ে সকাল, সন্ধ্যা, রাত শীর্ষ নেতাদের প্রোটকল দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রলীগের যে কমিটিগুলো হয়নি, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেই কমিটিগুলো পরিপূর্ণ করতে তাগাদা দেন। অথচ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সেপ্টেম্বর মাসে কোন কমিটি দিতে পারেনি।
জবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শক্তিশালী ইউনিটে কমিটি দিতে না পারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদাসীনতা। তাই এই উদাসিনতা বাদ নিয়ে ছাত্রলীগের ভেতরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য অতি দ্রুত কমিটি দিয়ে দেওয়া উচিত। নাহলে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়বে।’
জবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে কমিটি হবে না।’