২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৪১

দু’মুঠো খাবারের জন্য ইবির প্রাক্তন ছাত্রের আকুতি

এসএম পারভেজ  © সংগৃহীত

‘দীর্ঘদিন ধরে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ চার বছর যাবত একটা কিডনি নিয়ে আল্লাহর অশেষ কৃপায় ভালোই ছিলাম। প্রিয় মানুষগুলোর সহযোগিতা এবং ভালোবাসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ ছিলাম। বর্তমানে সেই কিডনিটিও ৮০ % ড্যামেজ হয়ে গেছে। ক্রিটিটিন লেভেল ৮.৮৫। এই সময়ের মধ্যে আমি এবং আমার পরিবার চিকিৎসার খরচ বহন করতে করতে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। আমি তিন সন্তানের বাবা, ওরা এখন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে। আমি টাকার অভাবে ওষুধ তো অনেক দূরে, দুই বেলা দু-মুঠো ভাতও পাই না। তাই এই গ্রুপের কাছে আবেদন জানাই, আমার চিকিৎসার জন্য না হোক, আমার তিনটি ছোট বাচ্চার খাবারের জন্য আমাকে কিছু আর্থিক সহায়তা করুন, প্লিজ।’ 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কথাগুলো লিখেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এসএম পারভেজ। বৃহস্পতিবার রাতে ইবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক গ্রুপে তিনি এসব কথা লিখেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে কিডনি রোগে ভুগছেন পারভেজ। পেটে টিউমার থেকে ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে অপারেশনে কেটে ফেলতে হয়েছে ডান কিডনি। তখন ডাক্তার বলে দেন বাম কিডনি ঝুঁকিতে আছে। ২৫ শতাংশ কর্মহীন হয়ে পরেছিল সেই সময়ই। বর্তমানে তা ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এত বড় রোগ নিয়ে বাঁচার আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে পারভেজের। বর্তমানে পরিবারে স্ত্রী ও ছোট তিন ছেলে নিয়ে করুণ জীবনযাপন করছেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পারভেজ পড়ালেখা শেষে বিভিন্ন এনজিও ও বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করেছেন। সর্বশেষ কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবুল বারাকাতের একটি প্রজেক্টে। থাকতেন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কেশবপুর গ্রামের বাড়িতে। ছোট সংসার মধ্যম উপার্জনে ভালই চলছিলো। কিন্তু পেটের টিউমার অপারেশনের পর থেকে পারভেজের জীবনে নেমে আসে কালো মেঘ। যা তার জীবনের সূর্যকে ঢেকে দেয়। আপারেশনের পর কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। জমানো অর্থ শেষ হয়। এরপর চেয়ে থাকেন অন্যের সাহায্যের আশায়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন তখন থেকেই সহযোগীতা করে আসছেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা অর্থ সংগ্রহ করে তার চিকিৎসায় সহায়তা করেছিলো।

তিন বছর আগে তার স্ত্রী জোস্না পারভিন সুইটি একটি মুরগির ফার্ম তৈরি করেন। ফার্মের আয় একমাত্র ভরসা ছিলো। কিন্তু করোনার মধ্যে মুরগির দাম কমে যায়। বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। সুইটি বলেন, কতটা অসহায় জীবনযাপন করছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এতোদিন শুভাকাঙ্খিদের সহায়তায় চলেছি। তিন ছেলের একজনেরও উপার্জন করার মত বয়স হয়নি। জমিজমাও নেই যে কিছু করে খাবো। আর ওর যদি কিছু হয়ে যায় তবে আর কি নিয়ে বাঁচবো?

ইবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, পারভেজের স্ট্যাটাসটি দেখার পর আমরা নির্বাহী কমিটির জরুরি জুম মিটিং করি। আমি আপাতত ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এছাড়া জাহাঙ্গীর, অপুদের দিয়ে ফান্ড সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।