ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে
শিক্ষার মানোন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে ২০১৭ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম সহ একাডেমিক বিষয়সমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে। অধিভুক্তির পর তীব্র সেশন জট, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, ত্রুটিযুক্ত ফলাফল প্রকাশ, গণহারে ফেল, খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নপদ্ধতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাত কলেজের প্রায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থীকে। এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সহ বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই একই বছর পরীক্ষার রুটিনের দাবিতে আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলের আঘাতে দুই চোখও হারাতে হয় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানকে ৷
২০১৭ সালে অধিভুক্তির পর থেকে আজ অবধি ৩ বছর ৭ মাসে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হলেও ফলাফলের ভোগান্তি এখনো পিছু ছাড়েনি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বলছেন, কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা আর ফলাফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতা তাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখনও তা চলছে ঢিমেতালে। প্রশাসন পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিলেও সব ক্ষেত্রে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। আবার কিস্তিতে ফলাফল প্রকাশের দরুন শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে আরও বড় ভোগান্তিতে। বিভিন্ন বিভাগের এক সেশনের শিক্ষার্থীরা একই সাথে পরীক্ষা দিয়ে কেউ কেউ ফলাফল পেয়ে যাচ্ছে চার মাসের মধ্যেই আবার কেউবা ১০ মাসেও পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৮ সনের ৩য় বর্ষের (২০১৫-১৬) সেশনের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ২৬ নভেম্বর৷ একই সাথে পরীক্ষা দিয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফলাফল পেলেও হিসাববিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স এই দুই বিভাগের ফলাফল এখনও প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজে মোট ২৫টি বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। চলমান এই ২৫ টি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা যারা ৩য় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে ২৩টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফলাফল পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দশ মাসেও কেন এই দুই বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি তার সঠিক উত্তর জানেন না কেউ।
এছাড়াও ২০১৮ সনের (২০১৪-১৫ সেশন) ৪র্থ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে ১৫ জানুয়ারি ২০২০৷ এই সেশনের ১৪ টি বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হলেও এখনও বাকী রয়েছে ১১ টি বিভাগের ফল প্রকাশ৷
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হিসাববিজ্ঞান ৪র্থ বর্ষের ফালাফল প্রকাশ হলেও ৩য় বর্ষের ফল প্রকাশ না হওয়ার কারনে যার পূর্ববর্তী বছরের বিভিন্ন কোর্সে মানোন্নায়ন পরীক্ষা দিয়েছিল তারা ফলাফল সমন্বয়ের আবেদন করতে পারছেন না৷ আর এসবের কারনে একই সাথে পরীক্ষা দিয়ে যাদের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তারা চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারলেও বাকিরা পারছে না৷ এতে অনেক শিক্ষার্থী বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন৷
১০ মাস আগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক বিষয়ের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ১২-১৩ সেশনের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ত্বোহা। যার ফলাফল এখনো না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী বলেন, ৪র্থ বর্ষে থাকাকালীন ৩য় বর্ষের ইম্প্রুভ দিয়েছিলাম। এরপর ৪র্থ বর্ষ শেষ করে এখন শর্তসাপেক্ষে এমবিএ তে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখনো ঐ তৃতীয় বর্ষের ইম্প্রুভের ফলাফল না পাওয়ায় ফলাফল ঝুলে আছে। আমার সহপাঠীরা স্নাতক পাশ করে বিভিন্ন চাকুরিতে আবেদন করলেও আমার সমন্বিত রেজাল্ট না থাকায় আমি স্নাতক শেষ করেও কোথাও আবেদন করতে পারছি না। এসব বিষয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কেন এমন সমস্যা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোঃ হুমায়ুন কবির বললের, হয়তো করোনা ভাইরাসের কারনে অফিস বন্ধ থাকায় এত দিনেও ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছে দ্রুতই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
সাত কলেজের ফোকাল পয়েন্ট এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, পরীক্ষা কমিটির কয়েকজন শিক্ষক ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন৷ হয়তো এই সমস্যার জন্য ফলাফল প্রকাশে বিলম্বিত হচ্ছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়ে আমি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলবো৷
এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ বাহালুল হক চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সাত কলেজের রেজাল্ট একের পর এক প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনার মধ্যে তারা একটু স্যাক্রিফাইস করবে না!” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।