৯ মাসেই বিলীন হওয়ার পথে কুবির ১৯ লাখ টাকার প্রকল্প
চলতি বছরের শুরুতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধনে আলোকসজ্জার জন্য সাড়ে ১৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও তা নিয়মিত তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে প্রায় দুশ’টি গার্ডেন লাইট লাগানো হলেও তার বেশিরভাগ বাল্বই চুরি হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে বেশ কিছু লাইটের শেড।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রকল্পটির শুরুতেই পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি এখন বিলীন হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে তারা মনে করছেন।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের মূল গেইট থেকে প্রশাসনিক ভবন হয়ে বিভিন্ন অনুষদের রাস্তা এবং গোল চত্বর থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত পুরো রাস্তায় প্রায় দুশ’র বেশি গার্ডেন লাইট লাগানো হয়। ভিতরে দেয়া হয়েছে সাদা বাল্ব। মুক্তমঞ্চ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত প্রায় সবকটি লাইট চুরি হয়ে গেছে। আর লাইটের শেডগুলো কিছু ভেঙে গেছে, আবার কিছু বেঁকে গেছে।
এছাড়া প্রকল্পটির বাস্তবায়নের শুরুতে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পার্কের আদলে লাইটিং বেমানান। তখন তারা সোডিয়াম লাইটের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কমিটি কিংবা প্রশাসন কেউই তা কানে না নিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে কাজ বাস্তবায়ন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল দপ্তর এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাড়ে ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পটির অধীনে উপাচার্যের বাসভবন ও ক্যাম্পাসে প্রায় তিনশ’টি গার্ডেন লাইট লাগানো হয়েছে। যার খরচ পড়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা।
আর বৈদ্যুতিক খুটি লাগানো হয়েছে ছয়টি। এছাড়া শহীদ মিনার ও নির্মানাধীন ডর্মেটরির দিকে নতুনভাবে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হয়। প্রথমে প্রকল্পটি বাগানের আলোকসজ্জার জন্য বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে সমাবর্তন উপলক্ষে রাস্তাগুলোর আলোকসজ্জার জন্য পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়।
এদিকে এক বছরের মধ্যেই লাইটের শেডগুলো ভেঙে যাওয়ায় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজকে সংস্কারের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন নতুন নয়। হলগুলোর কাজ প্রশাসনের তদারকির অভাবে এখনও শেষ হচ্ছে না। এমন লাইটিং পার্কে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। অর্থ ব্যয় করে অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা অপরাধ। পরিকল্পনায় যারা ছিলেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
আলোকসজ্জার বিষয়ে অভিযোগ করে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ইমরান মাহমুদ জীবন বলেন, ‘এ প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে প্রথম থেকেই তাদের কাজের চরম অবহেলা আর উদাসীনতা চরম ক্ষোভ জাগায় শিক্ষার্থীদের মনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্থানে পার্কের মত এমন লাইটিং হতে পারে এটা খুবই দৃষ্টিকটু।’
তিনি বলেন, ‘নিম্নমানের পণ্য ব্যাবহারের ফলে এক মাসের মাথায় অধিকাংশ লাইট নষ্ট হতে দেখি। এসব নিয়ে আমরা অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও কোন লাভ হয়নি। আর এখন তো পুরো প্রকল্পই বিলীন।’
এ বিষয়ে প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুত) মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘সাড়ে ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পে যে শুধু গার্ডেন লাইট ছিল বিষয়টি এমন নয়। এখানে লাইটের শেড, বৈদ্যুতিক খুটি, আগের পোল পরিবর্তন এবং নতুন করে বিদ্যুতের লাইন নেয়াসহ নানা ধরণের কাজ ছিল। কাজ বাস্তবায়নের পর করোনার সময়ে লাইট চুরি হয়ে গেছে। শেড কয়েকটা ভেঙ্গে গেছে। তার জন্যেও আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি।’
অপরিকল্পিত প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য ডিজাইন কনসালট্যান্ট রয়েছে। তাদের থেকে কোথায় কি হবে তা ইঞ্জিনিয়ার দপ্তর ঠিক করে। আমরা শুধু প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি দেখেছি।’
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল স্বীকার করে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় আমাদের পরিকল্পনার কিছু ত্রুটি ছিল। যে কারণ মূলত এমনটি হয়েছে। আর লাইট চুরির বিষয়টা হতে পারে ভিতরে কিংবা বাহিরের কেউ করছে। রক্ষণাবেক্ষণের যে বিষয়টি তা করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। তবুও যেহেতু শেড ভেঙ্গে গেছে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেগুলো সংস্কার করে দিতে বলবো।’