২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:০৯

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ কুবি অধ্যাপকদের

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক  © টিডিসি ফটো

করোনার কারণে প্রায় ছয় মাস থেকে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। অনলাইনে ক্লাস শুরু হলেও ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যোগ হয়েছে ৬ মাসের সেশনজট। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরির আবেদন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

এতে করে একদিকে যেমন সেশনজট বাড়ছে অপরদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে হতাশা। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এখনই চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের চারজন অধ্যাপক। পরীক্ষাসহ শিক্ষাব্যবস্থায় করোনা পরবর্তী সংকট মোকাবেলা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহাদাত বিপ্লব—

অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

শিক্ষার্থীদের প্রচুর ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যেমন পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না। তারা যেহেতু পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস করছে কিন্তু আগের সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো আটকে আছে। পরীক্ষাগুলো নিয়ে তাদের মানসিকতার উপর একটা চাপ পড়ছে। এটা শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য একটু বিব্রতকর। আমি মনে করি সেশনজট ঠেকাতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার বিষয়ে ইউজিসির সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে হবে যাতে পরীক্ষার ব্যাপারে তারা একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়। তবে এটা দ্রুতই সুরাহা হওয়া উচিৎ। না হলে ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশায় নিমজ্জিত হবে এবং ভবিষ্যৎ জীবন হুমকির মুখে পড়বে। যদিও আশার কথা হচ্ছে সরকার চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়িয়েছে কিন্তু এটা করোনাকালীন সময়ের জন্য।

যদি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে হয়, তাদের হতাশা থেকে মুক্তি দিতে হয় আমি মনে করি পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করা উচিৎ। এখনই সিদ্ধান্ত নেয়া না হলে তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অধ্যাপক ড. মুহ. আমিনুল ইসলাম আকন্দ
অর্থনীতি বিভাগ

করোনার দীর্ঘ বন্ধে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে যারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছে বা দিবে। আটকে থাকা পরীক্ষার কারণে তারা বিভিন্ন চাকরির আবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে আইন অনুযায়ী মিড টার্ম ও চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেয়ার কোন অনুমতি নেই। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় ৩ তারিখের পর আর বন্ধ না বাড়ানোই উচিত।

যেহেতু সরকারী অফিস, গণ পরিবহণ, বাজারসহ সবকিছু খোলা, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়া যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ম্যাচিউর্ড। ক্লাসগুলো অনলাইনে হবে, আর পরীক্ষাগুলো স্ব-শরীরে এসে শিক্ষার্থীরা দিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বিভাগগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেন খুললেই পরীক্ষা নিয়ে নতে পারে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে থিসিস ও ইন্টার্নশিপ শুরু হয়েছে। অনেকের স্নাতক শেষ সেমিস্টারের মাত্র ২ টি পরীক্ষা বাকী আছে। তারা না পারছে কোথাও আবেদন করতে, না পারছে পরীক্ষা শেষ করতে। তাদের পরীক্ষা নিয়ে নেয়া উচিৎ। আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো শেষ করতে পারে।

অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান
বাংলা বিভাগ

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি পড়েছে আমাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। তারা এমনিতেই ৪ থেকে ৬ মাসের সেশনজটে ছিল। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই সেশনে ভর্তি হয়ে যেখানে গতবছর পড়াশুনা শেষ করেছে সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনও স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারেনি। অলরেডি বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন শুরু হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা আবেদন করারই সুযোগ পাচ্ছেন না। আমাদের ছাত্ররা অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকবে, তা হতে পারেনা।

স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষার যাদের একটি বা দুটি পরীক্ষা বাকি আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত তাদের পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখার আহ্বান করছি আমি। আমি মনে করছি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে আমরা শিক্ষার্থীদের এ সংকট থেকে বের করে আনতে পারি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা ২ বছরেও যাচ্ছে না। আমাদের তো আর ২ বছর বসে থাকার সুযোগ নেই। এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যেন সংকট কিছুটা হলেও দূর হয়।

অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস

করোনার বন্ধের পর কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু করা যায় এ নিয়ে জুনে আমরা মিটিং করি এবং জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করি। তবে যেহেতু আইন অনুযায়ী অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া কোন অনুমতি নেই তাই আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খোলার সাথে সাথে ১৫ দিন থেকে ১ মাসের একটি রিভিউ ক্লাস এবং ইন-কোর্স শেষ করে পরীক্ষা নিয়ে ফেলতে হবে। আর যেহেতু যাদের সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়েছে তারা পরের সেমিস্টার অলরেডি শুরু করে দিয়েছে তারা পরীক্ষার ২ মাসের মাথায় যেন পরের সেমিস্টার দিতে পারে সে প্রিপারেশন আমাদের নিয়ে রাখতে হবে।

তবে সবার একসাথে পরীক্ষা নেয়ার দরকার নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একদিন এক ফ্যাকাল্টির পরীক্ষা হবে। এর জন্য একটা মনিটরিং টিম করা যেতে পারে। এভাবে চিন্তাভাবনা করলে আমার মনে হয় সেশনজট অনেকটা কমিয়ে আনা যাবে। করোনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন তার অর্ধেকটা পরীক্ষা নিলেই কমে যাবে। তবে একসাথে হলে বা মেসে শিক্ষার্থীরা চলে আসলে ঝুঁকি থেকেই যায়। এর জন্যে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। যাদের পরীক্ষা চলবে তারা আসবে। বাকীরা বাসায় থেকই অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে পারে।