দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়

এমপিওভুক্ত হওয়ার পর পাল্টে গেল কলেজ অধ্যক্ষের চরিত্র!

অধ্যক্ষ ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়
অধ্যক্ষ ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার আগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ১৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ। তবে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর পাল্টে গেল তার চরিত্র! অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে নন-এমপিও অবস্থায় নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এর নেপথ্যে রয়েছে, নিয়োগ বাণিজ্য। ফের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ননএমপিও থাকা অবস্থায় কলেজটিতে যারা চাকরি নিয়েছিলেন তারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু এতে প্রতিকার পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি বরিশাল জেলার দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জস্থ দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে কার্যক্রম শুরু করা দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালের ২০ মে জাতীয় দৈনিকে আবশ্যক (পিসি-২৬৯৯/১৫) শিরোনামে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগের অনুকূলে সরকারি বরিশাল কলেজে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড নির্বাচিতদের নিয়োগদানের সুপারিশ করেন।

ওই পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষক নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন। এর মাধ্যমে গণিত বিষয়ে মো. মনিরুজ্জামান, কৃষি শিক্ষা বিষয়ে মুসরাত জাহান, রসায়ন বিষয়ে শামীমা মুকুল ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে মাকসুদুর রহমানসহ ১৫-১৭ জন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নিয়োগ পেয়ে শিক্ষকগণ কলেজে যোগদান করে বিনা বেতনে পাঠদান চালিয়ে যান।

এ বিষয়ে রসায়ন বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক শামীমা মুকুল বলেন, কলেজটি চলতি বছর সরকারিকরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে কলেজে শিক্ষকতা করলেও তারা কোন বেতন-ভাতা পাননি।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারী পুরাতন নিয়োগ সুপারিশের কাগজ জাল করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন। তিনি ২০১৫ সালে নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ কপিতে নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের কাছে সাক্ষর আনতে গিয়েছেন।

তখনকার নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার অলিউল ইসলাম জানান, ২০১৫ সালে এমপি পংকজ দেবনাথের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছেন তারা। বর্তমানে কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন নিয়োগকৃত যে সকল শিক্ষকদের বাদ দেয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরকে মিসগাইড করা হচ্ছে।

তিনি জানান, নতুন করে নিয়োগের সুপারিশকৃত তালিকা তৈরী করলেও তাতে তিনি কোনভাবেই সাক্ষর করবেন না। অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন তাকে এ সংক্রান্ত একটি তালিকায় সাক্ষর করার কথা বললে তিনি বিস্মিত হন। এছাড়া অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন শিক্ষক নিয়োগের কথা না বলে তাকে অধ্যক্ষ নিয়োগের কথা বলে সাক্ষর চেয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষকগণ কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তা আমার জানা নেই। এ সময় তিনি সাক্ষর নকল করার অভিযোগ করেন ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী শিক্ষকদের নিয়োগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘নন-এমপিওভুক্ত কলেজ বলে লোকাল শিক্ষকদের ধরে রাখার চেষ্টা করছি’।

তিনি আরও বলেন, নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অভিযোগকারী ওই চারজন শিক্ষক এখনো আছেন। তবে ওই শিক্ষকগণ এমপি পংকজ দেবনাথের কাছেও গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এমপি মহোদয় করোনা আক্রান্ত। তিনি সুস্থ হলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মাউশির উপ-পরিচালক (কলেজ-১, সরকারি কলেজ শাখা) ড. শাহ্ মো. আমির আলী তার দফতরে অভিযোগ জমা হয়েছে স্বীকার করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগে কী উল্লেখ করা হয়েছে তা এখনো দেখা হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার মূল্যায়ন শিটে অবশ্যই নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্য, বিশেষ করে একজন সরকারি কলেজের শিক্ষক, দফতরের প্রতিনিধি এবং গভর্ণিং বডির সাক্ষর থাকতে হবে। নতুন করে অধ্যক্ষ যদি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কাউকে নিয়োগের চেষ্টা করেন তা কোনভাবে বৈধ হবে না।

তিনি আরও বলেন, তখনকার নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগের পর ১৯ সেপ্টেম্বর দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অনুমোদিত যে ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জের দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয় একটি।


সর্বশেষ সংবাদ