হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ভাবনায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

  © টিডিসি ফটো

বিজ্ঞানভিত্তিক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দিনাজপুরে মনোরম, জীব-বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সবুজ গাছপালায় ঘেরা নয়নাভিরাম এক সুনিবিড় পরিবেশে যাত্রা শুরু করে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৩৫ একর জায়গাজুড়ে দিনাজপুর শহর হতে ১০ কিলোমিটার উত্তরে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন বাশেরহাট নামক স্থানে অবস্থিত। উত্তরাঞ্চলের স্বনামধন্য এই বিদ্যাপীঠটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে গৌরবের ২০টি বছর সফলতার সঙ্গে পেরিয়ে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২১তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। ২১ বছরে পদার্পণ করা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠটি নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাশা ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন।

‘এই দেশের মানুষ ঠিক তখনই খুঁজে পাবে মুক্তির পথ, যখন শোষণ থেকে, অশিক্ষা থেকে পাবে মুক্তি। শুভ দাসগুপ্তের এ চরণগুলোই যেনো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্র। দেখতে দেখতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি তার ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে।’ কৃষি অনুষদের লেভেল-৪ এর অনামিকা স্যানাল নামের এই শিক্ষার্থী তার ভাবনার কথাগুলো এভাবেই জানিয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় হতে শত শত গ্র‍্যাজুয়েট বের হয়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন। তারাই আগামীতে দেশের সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করবেন, দেশকে নেতৃত্ব দেবেন এমনই প্রত্যাশা আমাদের সকলের। কিন্তু ভালো মানের গ্র‍্যাজুয়েট তৈরিতে যেমন শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম তেমনি যারা শিক্ষা নিবেন তাদের জন্যও দরকার আধুনিক প্রযুক্তি সম্মত গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, ক্লাসরুম ও আবাসন সুবিধা সম্বলিত শিক্ষার পরিবেশ।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়ছে না সুযোগ সুবিধা। তবে বর্তমান উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে সংযোজন হতে চলেছে ১০ তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন ও ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হল। আশা করি, এর মাধ্যমে ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব সংকট, আবাসন সংকট কাটিয়ে আরো সমৃদ্ধ হবে প্রিয় হাবিপ্রবি।’

রাগীব হাসান সিফাত নামের কৃষি অনুষদের আর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভোরের নতুন সূর্য মানেই নতুন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার আরও একটা অপার সসম্ভাবনা। দশ হাজারেরও অধিক এমন স্বপ্নকে ঠাঁই দিয়ে তাদের জীবনকে রঙিন করে তোলা তীর্থভূমিই হচ্ছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।’

তিনি বলেন, ‘ছোট্ট চারা গাছ থেকে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন লালনের মহীরুহ বৃক্ষ হয়ে ওঠা আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আর কয়েক দিন পরেই। উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে অবস্থান গ্রহণ করুক বিশ্ব মানচিত্রে। শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম ও স্বীয় স্বকীয় গুণাবলীতে দেশে- বিদেশে সর্বত্রই অনন্য হয়ে উঠুক আমাদের প্রাণের স্পন্দন স্বরূপ।’

সিফাত বলেন, ‘প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। কিন্ত এই বছর করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাসায় অবস্থান করছে। তাই জাঁকজমকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা না গেলেও প্রশাসন বিকল্প কিছু উদ্যোগ নিতে পারে। সেটি হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, ক্যাম্পাস সংলগ্ন গ্রামগুলোর অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।’

‘নতুন কিছু উদ্ভাবন করা। হাবিপ্রবির বিগত সময়ের বিভিন্ন বাধা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২১ বছরে আসার ইতিহাস, অর্জন নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরী করা। ক্যাম্পাসকে আলোক সজ্জিত করা। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়কে র‍্যাংকিং বাড়াতে গবেষণার মাধ্যমে নিত্য নতুন আবিস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেই জন্য কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাব ফেসিলিটিস বৃদ্ধি করে প্রাকটিক্যালি হাতে কলমে শেখার ব্যাবস্থা করতে হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করে কাউকে যেন বেকার থাকতে না হয়, এমনই প্রত্যাশা ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন ফিশারীজ অনুষদের জুয়েল রানা।

ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘একজন মানুষের জন্ম তারিখ বা জন্মদিবস যেমন তাকে অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু আলাদা করে তোলে, তেমনি একজন ছাত্রকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা দিবস ততটাই আলাদা করে। করোনা পরিস্থতির কারণে যেহেতু সবকিছু বন্ধ তাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মসজিদে দোয়া এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে যে এতিমখানা রয়েছে সেই এতিম বাচ্চাদের নতুন পোশাক এবং একবেলা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থীর ন্যায় আামিও চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানে অধিষ্ঠিত হোক। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত এবং অপরাজনীতি মুক্ত হোক সকল বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোপরি সেশনজট মুক্ত একটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ক্যাম্পাস গড়ে উঠুক এই প্রত্যাশা রইলো।’

জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া খাতুন রুবি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ায় এখন আমরা বেশ ভালো অবস্থানেই আছি। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারণ তারা নিরাপত্তার আশ্বাস এখানেই পান। আশা করি ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম বর্ষে প্রত্যাশা থাকবে অসুস্থ রাজনীতি মুক্ত, ছাত্রবান্ধব ও বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ আগামীর ক্যাম্পাস।’

তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার আরেক নাম হাবিপ্রবি। নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মায়া আর ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় হাবিপ্রবিতে প্রিয় বিষয় মার্কেটিং বিভাগ নিয়ে পড়ছি। জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো পার করছি এখানেই। আমার সকল ভাবনা হাবিপ্রবিকে ঘিরেই। তাই প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে খুব ভালো পর্যায়ে দেখতে চাই। সকল বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে শিক্ষা, গবেষণাসহ সব দিক থেকেই এগিয়ে যাবে এই প্রিয় ক্যাম্পাস এটা কামনা করি।’


সর্বশেষ সংবাদ