চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যারা
উপাচার্য শূন্য হয়ে পড়েছে দেশের চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদায় নিয়েছেন। ফলে সেখানকার প্রশাসনের শীর্ষ পদে এখন কেউ নেই। ভিসি ও ট্রেজারার না থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগস্টের বেতন পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য ও ট্রেজারারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা বিদায় নিয়েছেন। আর গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য ছাড়াই চলছে প্রায় এক বছর ধরে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এখন দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে, গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। সে কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ও উপাচার্যশূন্য। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য না থাকায় আগস্ট মাসের বেতন-বিল নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুতই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পদগুলোর জন্য অনেকগুলো নাম আলোচনায় রয়েছে।
জানা গেছে, শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন আহম্মদের মেয়াদ গত ১৪ আগস্ট শেষ হয়েছে। করোনার কারণে একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার পদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
তবে নামগুলোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতার ভিন্নমত রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও সিন্ডিকেট সদস্য। শীর্ষ তিন পদে নিয়োগে তার মতামত গুরুত্ব পেতে পারে। সব ঠিক থাকলে গুরুত্বপূর্ণ তিন পদে চলতি সপ্তাহেই নিয়োগ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমরা ২৮ বা ২৯ তারিখের মধ্যেই বেতন পাই। কিন্তু ভিসি না থাকায় আগস্টের মাসের বেতন কবে পাব অনিশ্চিত। বেতন দেরিতে পেলে পরিবার নিয়ে ধারদেনা করে চলতে হবে।’
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের জন্য সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকান্দার আলী, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ও সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. অলক কুমার পালের কথা শোনা যাচ্ছে। উপাচার্য নিয়োগ হলে বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার পদে নিয়োগ পেতে পারেন।
এদিকে টানা ১০ দিন উপাচার্য নেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে প্রশাসনিক ও অর্থ-সংক্রান্ত কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশীদ আসকারী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ত্বোহার মেয়াদ গত ২০ আগস্ট শেষ হয়। ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট দু’জনই এ পদে নিয়োগ পান। অধ্যাপক আসকারীই প্রথম উপাচার্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। আগের উপাচার্যদের আন্দোলনের মুখে সরে যেতে হয়েছিল।
অধ্যাপক আসকারী দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেতে চান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। এছাড়া পদটি পেতে ইচ্ছুক অন্য শিক্ষকরা হলেন, সদ্য সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ত্বোহা, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমান ও সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামও উপাচার্য হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
গত ২৭ আগস্ট ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। উপাচার্য পদে নতুন যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন- ডুয়েটের সাবেক ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. গণেশ চন্দ্র সাহা, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীন হাসান চৌধুরী।
এর মধ্যে ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি উত্তরাঞ্চলের একজন সংসদ সদস্য ও হুইপের নিকটাত্মীয়।
অপরদিকে আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সরে যান বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। এর দেড় মাস পর ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইটিই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছরেও উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের জন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান। এছাড়া ঢাবির শিক্ষক মিজানুর রহমান ও ডুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ আবু নাঈমও আলোচনায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।