৫ পত্রিকা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেন বেরোবির কিছু শিক্ষক
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত যুগান্তর, ইত্তেফাকসহ পাঁচ গণমাধ্যম প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন ‘নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’। এক বিবৃতিতে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হলেও সাংবাদিকরা কেউ কেন্দ্রীয় অফিসে সংবাদ পাঠায়নি।
বিবৃতিতে চার জন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়, তারা সকল সংবাদ কেন্দ্রীয় অফিসকে অবহিত করে না এবং এদের কাছ থেকে কোন গঠনমূলক রিপোর্ট পাওয়া যায় না বরং এরা এই দায়িত্বের অপব্যবহার করছে। শুক্রবার নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে আহবায়ক সুমাইয়া তাহসিন হামিদা এবং সদস্য সচিব মোঃ খালিদ হাসান রিয়েল এ বিবৃতি দেন।
কিছু শিক্ষকদের এমন বিবৃতির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। তারা মনে করছেন, এতে সাংবাদিকদের সংবাদ লেখায় হস্তক্ষেপ করেছে ওই সংগঠনটি।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন প্রসঙ্গে’ এই শিরোনামে তারা বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “লোকপ্রশাসন বিভাগের মাহফুজুল ইসলাম বকুল (Banglanews24.com) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রাব্বি হাসান সবুজ (যুগান্তরের সংবাদদাতা) লোকপ্রশাসন বিভাগের ইভান চৌধুরী (মানবজমিন/ঢাকা টাইমস) এবং বাংলা বিভাগের মোবাশ্বের আহমেদ( ইত্তেফাক)-এর ক্যাম্পাস সংবাদ সংবাদদাতা হিসেবে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করছে।”
“কিন্তু এরা সকল সংবাদ কেন্দ্রীয় অফিসকে অবহিত করে না এবং এদের কাছ থেকে কোন গঠনমূলক রিপোর্ট পাওয়া যায় না বরং এরা এই দায়িত্বের অপব্যবহার করছে। এতে করে তারা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ও নিজেদের ক্ষতি করছে।”
“সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুরের তিন কর্মকর্তা যারা কিনা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মামলার আসামি, তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন।”
“দৃশ্যত এরকম একটা ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলোর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রীয় অফিসে অবহিত করেনি। এ ব্যাপারে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই যা অনভিপ্রেত একটি ঘটনা এবং উদ্দেশ্যমূলক। তাই নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এরকম ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস সংবাদদাতার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার জন্য। নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এদের আসল মদদদাতাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।”
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক ববঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ূয়া জানান, একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভা যতটুকু বৃদ্ধি করে, আপনাদের দ্বারা বোধ হয় ততটুকুও সম্ভব নয়। একজন সাংবাদিক কোন নিউজ করবে বা করবে না তা বলার অধিকার আপনার নাই। সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে কথা বলার আগে দশ বার ভাববেন!
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ কাকে সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দিবে, কাকে দিবে না সেটি একান্তই কর্তৃপক্ষের অধিকার। আপনাদের মাথা ব্যথা কেন?
এ বিষয়ে নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের বিবৃতিতে অভিযুক্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলানিউজ২৪ এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মাহফুজুল ইসলাম বকুল বলেন, সাংবাদিকতা স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ একটি পেশা। শিক্ষকতার মত মহৎ একটি পেশায় নিয়োজিত থেকে এমন একটা দায়িত্বহীন কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই বিবৃতি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলে আমি মনে করি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোবাশ্বের আহমেদ বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের বিবৃতি নিঃসন্দেহে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের পরিপন্থি, অন্যায় এবং অপরাধ। তাদের এই বিবৃতি ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
উল্লেখ্য, শিক্ষকের এই সংগঠন বিভিন্ন সময়ে এমন উদ্ভট বিবৃতি আর প্রেস রিলিজ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিল। এই সংগঠনের অধিকাংশ শিক্ষক যোগদান করার সময়কাল এক থেকে দুই বছর।