অনলাইন ক্লাসের তোড়জোড়ে খোঁজ নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
করোনা সংকটে অনলাইন ক্লাসে বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তোড়জোড় থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এই সময় শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের প্রায় ২৮ লাখ শিক্ষার্থী। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সমস্যা, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা বা ইন্টারনেটের ধীরগতি, ডিজিটাল ডিভাইসের অভাবসহ নানা কারণে অনলাইন ক্লাস সেভাবে চালু করতে পারেনি কলেজগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরও এ ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তারা কলেজগুলোকে অনলাইন ক্লাস শুরু করার তাগিদপত্র দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। ভবিষ্যতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সেশন জটের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত এই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বর্তমানে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে ৬ আগস্টের পরও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতেই কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে গত এক দশকে সেশনজট যে অনেকাংশে কমে এসেছিল, করোনায় আবারও তা ফিরে আসার আশঙ্কা জেগেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, ‘করোনায় অনার্স ফাইনাল, মাস্টার্স ফাইনাল, ডিগ্রি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ এবং মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আটকে গেছে। কলেজগুলো যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য একটা উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা।’
একই অবস্থা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের সবাই মূলত অনিয়মিত। তাঁদের পড়ালেখায় মানের বালাই নেই। করোনায় সেখানেও পড়ালেখা বন্ধ। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদরাসায়ও পড়ালেখা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে শুরুতে অনলাইন ক্লাসে অনীহা ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। তবে ইউজিসির চাপাচাপিতে চলতি মাস থেকে তারা অনলাইন ক্লাস শুরু করে। তবে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ই অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পেরেছে। স্বায়ত্তশাসিত ও ঐতিহ্যবাহী ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ক্ষেত্রে অন্যদের পথ দেখাতে পারেনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘শুরুতে আমরা অনলাইন ক্লাসের পক্ষে ছিলাম না। কিন্তু কত দিন আর বসে থাকা যায়। আমরা মাত্রই শুরু করেছি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক ভালো। ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, নেটওয়ার্কের সমস্যাগুলো আশা করছি সরকার শিগগিরই সমাধান করবে। তাহলে এই অনলাইন ক্লাস আরো গতি পাবে।’
গত ২ জুলাই ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাস শুরু করতে হবে। অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত ও বৈষম্যমূলক পন্থায় তা চালুর চেষ্টা হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আত্মঘাতী। সংগঠনটি সব শিক্ষার্থীর জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেট, বৃত্তির ব্যবস্থা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেন।
ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। তাদের অনেকেই এখন ট্রায়াল করছে। এই ক্লাস নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার জায়গায় যেতে আরো সময় লাগবে। সব শিক্ষার্থী যাতে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারে এ জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেট পেতে আমরা চেষ্টা করছি। শিক্ষার মানের ব্যাপারটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে বায়োটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গত ৯ থেকে ১১ মে একটি সমীক্ষা চালায়। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের দুই হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। এর মাধ্যমে বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৩ শতাংশ অনলাইনে ক্লাস করতে চান, বাকি ৭৭ শতাংশ আগ্রহী নন। ৫৫ শতাংশের ক্লাস করার উপযোগী ডিভাইস অর্থাৎ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার রয়েছে, বাকিদের নেই। ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার উপযোগী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। আর ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, অনলাইনে ক্লাসরুম সত্যিকার ক্লাসরুমের মতো কার্যকর নয়।