বন্ধের মধ্যেই জাবিতে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের গুঞ্জন
দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। তবে বন্ধের মধ্যেও থেমে নেই ছাত্র রাজনীতি। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে নেতাকর্মীদের অনলাইন কেন্দ্রিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় সকল নেতাই এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা এবং বিএনপির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে লবিং ও তদবিরের চেষ্টা চালাচ্ছে পদ-প্রত্যাশী ছাত্রনেতারা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একাধিক সূত্র জানান, চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই জাবিতে তিন মাসের জন্য আহবায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক টিম ঢাকা ১(ক) এর টিম লিডার হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, জাবিতে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
কমিটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত ছাত্রত্ব, বৈবাহিক অবস্থা এবং দলের প্রতি নিবেদিত এমন মানদন্ডে যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেবো। যাদের অবস্থান ভাল মনে হবে, যারা নেতৃত্বে আসলে সংগঠন ভাল চলবে আমরা তাদেরকে নিয়েই কমিটি গঠন করবো।
এদিকে কমিটিতে আহ্বায়ক পদের জন্য শাখা ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকত জোড় তৎপরতা চালাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের হাতে বেশকয়েকবার নির্যাতিত এ ছাত্রনেতার হাতেই জাবি ছাত্রদলের কল্যাণ দেখছে সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা।
তবে আহবায়ক পদে অন্যান্য প্রার্থীরাও উচ্চপর্যায়ের লবিং ও তদবির করছেন। এর মধ্যে পদের দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর, ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম সাগর, সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বিপ্লব, বঙ্গবন্ধু হলের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ন হাবিব হিরণ।
এছাড়া শহীদ সালাম বরকত হলের যুগ্ম আহ্বায়ক আফফান আলী, শহীদ রফিক জব্বার হলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মার্জুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল চৌধুরী সোহেল ও ফয়সালসহ প্রমুখ ছাত্রনেতা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টারত আছেন।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হয়েও নতুন কমিটিতে থাকতে চাওয়ার ব্যাপারে আব্দুর রহিম সৈকত বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক আগামীর রাষ্ট্র নায়ক তারেক রহমান সারা বাংলাদেশব্যাপী ছাত্রদলকে ঐক্যবদ্ধ, গতিশীল ও আন্দোলন মুখী করার লক্ষ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী কমিটিতে ত্যাগ, নির্যাতিত, যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মূূল্যায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু আহ্বায়ক কমিটি হবে সেহেতু কেন্দ্রীয় সংসদের সকল শর্তপূর্ণ করে এমন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি দিলে সেই কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হল কমিটি দিতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি জুনিয়ররা দ্রুত তাদের পরিচয় পাবে।
অন্যদিকে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ঘনিষ্ঠ বলে গুঞ্জন রয়েছে। পদের দৌঁড়ে এগিয়ে থাকা এই নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আশা রাখি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির একনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু হলের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ন হাবিব হিরণ বলেন, আমি মনে করি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মাঠে থাকবে এমন নেতৃত্ব আশা উচিত।
এদিকে উচ্চপর্যায়ে কিছু লবিং ও তদবিরের মাধ্যমে চেষ্টারত শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বিপ্লব বলেন, ছাত্রদল করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমার হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। তারপরও সংগঠনের প্রতিটি কাজে সক্রিয় ছিলাম। তাই আমার প্রত্যাশা দল আমাকে যথাযথ মূল্যয়ন করবে।
লোকাল লবিংয়ের মাধ্যমে প্রচেষ্টারত ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম সাগর বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের হামলা, মামলা, নির্যাতন উপেক্ষা করে ছাত্রদলের যেসব নেতাকর্মী গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নির্ভীকভাবে সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে কমিটি গঠন করলে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন অনেক বেশি বেগবান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলছেন, শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল রানা বহিস্কার হওয়ার পরও আব্দুর রহিম সৈকত সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে নিয়মিত পালন করে গেছেন কেন্দ্রের প্রত্যেকটি কর্মসূচি। করোনার এই মহামারীর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় ক্ষুদ্র দোকানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে সবার প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন এই ছাত্রনেতা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ এই ছাত্রনেতাকে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি হলে, অতি দ্রুত হল কমিটি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে। এছাড়া তার পূর্বের দায়িত্বপালনে নিষ্ঠাবান চরিত্র কেন্দ্র মূল্যায়ন করবে।’
তবে অন্যান্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও সাধারণ নেতাকর্মীরা বলেন, আমরা সকলেই কমবেশি ক্ষমতাসীনদের নির্যাতিত। অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যেও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব আছে। কেন্দ্রের কাছে সবদিক থেকে যোগ্য একজন ডাইনামিক নেতাই প্রত্যাশা করে জাবি ছাত্রদল পরিবারের প্রতিটি সদস্য।
ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি গঠনের ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারন সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন দলের কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমাদের গণতান্ত্রিক সহবস্থান জরুরী। যেটা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে খুব কম সময় হয়েছে।
করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ অবস্থায় নেতাকর্মীরা সকলেই স্বভাবিক অবস্থায় আছে কিনা সেটিকে প্রাধান্য দিয়েই কমিটি গঠনে মনোযোগ দিতে বলেন ক্যাম্পাস ছাত্রদলের এ অভিভাবক। এক্ষেত্রে অনলাইনের যৌক্তিক ব্যবহার কাম্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।