তড়িঘড়ি করে অনলাইন ক্লাস, বিপাকে রাবি শিক্ষার্থীরা
করোনা সংক্রমণের মধ্যে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিদের সাথে উপাচার্যের ভার্চুয়াল এক সভা থেকে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। সভায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থেকেই সব বিভাগে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। হঠাৎ করে এ ঘোষণা দেওয়াতে বিপাকে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, করোনা মহামারির মাঝামাঝি সময় থেকে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার একমাত্র উপায় হিসেবে অনলাইন ক্লাস নিয়ে আলোচনা চলছিল সংশ্লিষ্ট মহলে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অনেক আগে থেকেই অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা মানিয়ে নিলেও, সে ব্যবস্থা প্রচলনে কতটা সক্ষমতা আছে দেশের? ধীরগতির ইন্টারনেট, শিক্ষার্থীদের সবার হাতে স্মার্টফোন থাকার নিশ্চয়তা, শিক্ষকদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতাসহ নানান প্রশ্ন উঠতে থাকে নানা মহল থেকে। বিশেষত প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা যাদের হাতে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য দরকারি প্রযুক্তি পন্য, উচ্চদামে ইন্টারনেট ডাটাপ্যাক কেনার সক্ষমতা নাই, তাদেরকে এ ক্লাস বঞ্চিত করার নৈতিক অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তবে এ সিদ্ধান্তের সাথে জড়িতদের দাবি অন্তত শুরুটা করতে চান তারা। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে আগাতে চাইছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন ধারার সে ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসার পর অনেকটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন রাবির শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপে করা পোস্ট ও মন্তব্য গুলোতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ফুটে উঠে। অনেকেই ব্যাঙ্গাত্মকভাবে মতামত জানিয়েছেন অপ্রস্তুত অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
সুপ্ত বিহঙ্গ নামের এক শিক্ষার্থী সোমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনলাইন ক্লাসের ভোগান্তি নিয়ে লেখেন, অনলাইন ক্লাস হবে ভালো কথা। কিন্তু আমি তো আমার স্মার্টফোন বিক্রি করে করোনা কালে পরিবারকে সাপোর্ট দিয়েছি। এখন নতুন করে ফোন কিনবো সে সামর্থ্যও নেই। সেক্ষেত্রে আমি কিভাবে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিবো?
মো. কামরুল ইসলাম নামের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, গ্রামে নেটওয়ার্কের যে অবস্থা তাতে ফেসবুকের একটা পোস্ট দেখতে গেলে বারবার বাফারিং করে। সেখানে অনলাইনে ক্লাস? যাদের সমস্যা এরা কি তাহলে ক্লাস করবে না নাকি যাদের নেট স্পিড ভাল শুধু তাদের জন্য অনলাইন ক্লাসের আয়োজন?
এদিকে, ক্লাস শুরুর প্রথম দিন (৯ জুলাই) ৬০-৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুষদের ডিনদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে শুরুর দিনে ক্লাসে ফিরতে পারেনি বেশিরভাগ বিভাগ। আবার ক্লাসের যে উপস্থিতির হার অনুষদের ডিনরা জানিয়েছেন তা নিয়ে ভিন্ন মত আছে সংশ্লিষ্ট অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ফজলুল হক জানান, প্রাথমিকভাবে ২/১টি ক্লাস নেয়া হয়েছে। বিভাগগুলো এখনো রুটিন তৈরি করতে পারেনি। রুটিন তৈরী করার জন্য একাডেমিক কমিটির মিটিং হবে। আশা করি, রুটিন অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের ক্লাস শুরু হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমরা শুরুটা করতে চেয়েছি। সেটা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে সব বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের সমস্যায় কথা বিবেচনায় রেখে উপাচার্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি অনলাইন ক্লাসের খুটিনাটি সমস্যা সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করবেন। পরে সেটা সমাধান করা হবে।