শিক্ষার্থীদের কাঁধে করোনার ভার, সেশনজট নিয়ে যা ভাবছে কুবি
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে তীব্র সেশনজটে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। ভয়াবহ এ সেশনজট এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরি ভূমিকা না নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় সব বিভাগেই সেশনজট রয়েছে। কোন কোন বিভাগে দুই থেকে আড়াই বছরের জটেও রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রসায়ন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ২০১৮ সালের মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ করার কথা থাকলেও ২০২০ সালে এসেও তারা এখনও স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টার শেষ করতে পারেননি।
এছাড়াও প্রত্নতত্ব, নৃবিজ্ঞান, আইসিটি, সিএসই বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ জটের মধ্যে রয়েছেন। আগে থেকে জট থাকলেও করোনার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা আরও ব্যপকভাবে তৈরি হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিছু বিভাগে নিজ উদ্যোগে কয়েকজন শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস শুরু করলেও শিক্ষার্থীদের সাড়া তুলনামূলকভাবে কম পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর কারণ হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়া এবং ইন্টারনেট খরচ বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছেন না।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান অনলাইন ক্লাসকে বর্তমান সময়েরে জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, অবশ্যই অনলাইন ক্লাস একটি ইতিবাচক দিক। অনেক প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু করা হয়েছে। আমি নিজেও আমার একটি কোর্সের ক্লাস নিচ্ছি অনলাইনে। এতে করে কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীদের জট কমানো যাবে।
তবে এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছুটি হলেই গ্রামের বাড়িতে চলে যান। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসেন বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। এদের সবাই নেট ব্যবহারের সুযোগ পায় না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক থাকে না। হয়তো মোবাইলে এমবি আছে কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই। আবার হয়তো নেটওয়ার্ক আছে কিন্তু এমবি কেনার পয়সা নেই। এতে করে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন না।
কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সমস্যা সমাধান করে অনলাইন ক্লাস শুরু করে দেয়া পক্ষে মত দিয়েছেন এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, কবে এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাবো সেটা আমরা জানি না। একটা বছর শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে চলে গেলে কি হবে, কি হবে না জানি না। তবে শিক্ষার্থীরা একটা ট্রেনিংয়ের মধ্যে থাকুক। এ কারণে আমার মনে হয় বসে না থেকে এখনই অনলাইন ক্লাসে যাওয়া উচিত। যেহেতু নেট সমস্যা আছে যারা ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবে না তাদের জন্য শিক্ষকরা হাতে লিখে বা পিডিএফ করে ফাইলটা তাদের কাছে পৌছে দিতে পারেন। এত করে প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকলো তারা।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত তিশা জানান, অনলাইনে ক্লাস করতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই নেটওয়ার্ক সার্ভিস ভালো না, তাই ক্লাসগুলো যদি রেকর্ড করে নিজ বিভাগের গ্রুপে দেওয়া হয় তাহলে হয় তো পরেও তা দেখা যাবে। এক্ষেত্রে এটেন্ডেন্স মার্ক রাখা যাবে না। আবার বিভাগের যে সোসাইটিগুলো থাকে প্রতিবছর তো তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক অর্থই খরচ করে। এক্ষেত্রে তারা যদি সরকারের প্রণোদনার আশায় বসে না থেকে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মোবাইলে এমবির খরচ প্রদান করতে পারেন, তাহলে সবার সুবিধা হবে।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমন বলেন, অনলাইনে আমি আগ্রহী নই। কারণ আমাদের গ্রামে নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে, সেটা যে সিমই হোক। সো এটা কোনোমতেই সম্ভব নয়, ওয়াইফাই ছাড়া।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহের বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে যাদের সুযোগ আছে, আমরা বলেছি ক্লাস নেয়ার জন্য। তবে কয়েকজন শিক্ষক আমাদের জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের থেকে একেবারেই কম রেসপন্স পাচ্ছেন। ক্লাসে আট থেকে ১০ জনের বেশি থাকে না বলে জানিয়েছেন। কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে এটা সত্য। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে থাকায় তারা অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারবেন না। আবার অনেকে খরচ বেশি হওয়ায় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ছুটি কমিয়ে দ্রুত সেমিস্টার শেষ করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বড় বড় যে ছুটিগুলো আছে আমরা সেগুলো কমিয়ে এবং সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়েও যদি পারা যায় সেশনজট কমানোর জন্য চেষ্টা করবো।