সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তির দাবি জানিয়ে জবির ১৯ ছাত্র নেতৃবৃন্দের বিবৃতি
করোনাভাইরাসের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া ও শিক্ষাব্যয় সংক্রান্ত সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিক উদ্যোগ ও সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তির দাবি জানানো হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন সমূহসহ, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের ১৯ জন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান সংকটে সবচেয়ে মানবিক সংকট বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিষয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে ব্যয় বহুল শহর রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত দেশের একমাত্র অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যদিয়ে শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করতে হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতি সেই সংকটকে আরও বেশী ঘনীভূত করেছে। টিউশন বা কোচিং ক্লাস করে যারা ঢাকা শহরে জীবিকা নির্বাহ করতো বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জীবনধারণ এক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংকট অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে মেস মালিকদের সাথে শিক্ষার্থীদের ভাড়া নিয়ে বিরোধ তৈরী হয়েছে। এর মূল কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতা নেই। দীর্ঘদিন এমন পরিস্থিতি চলমান থাকায় এটি এক মানবিক সংকট তৈরী করেছে।
আমরা মনে করি চলমান বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আবাসন ব্যবস্থা থাকা সত্বেও তারা শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিষয় গুরুত্বের সাথে নিয়ে সমাধানে এগিয়ে এসেছে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জরুরি।
বিবৃতে তারা উল্লেখ করেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শিক্ষার্থীদের গড় মেসভাড়া ১৭০০-২৫০০ টাকা। এর মধ্যে প্রতিমাসে ১৫০০ টাকাও যদি আর্থিক সাহায্য পাওয়া যেতো, এই সংকট অনেকটাই উৎরে ফেলা যেতো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত সকল ব্যাচে মিলিয়ে সর্বমোট শিক্ষার্থী আছেন ১৬ হাজার ৯১৭ জন। এদের প্রত্যেককে আগামী ৬ মাসও যদি ১৫০০ টাকা করে সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি দেয়া যায় তাহলে এর মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ, প্রতিটি শিক্ষার্থী ৬ মাসে ৯,০০০ টাকা করে পাবে। এই মহাসংকটে এই টাকাটা সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে দেয়া হলে মেসভাড়াসহ শিক্ষা সংকট দূর হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে হল, ডাইনিং সহ বিভিন্নখাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সকল কোনো খরচ নেই। অন্যদিকে, এখানে শিক্ষার্থীদের পেছনে মাথাপিছু ব্যয় অনেক কম। ইউজিসির ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ব্যয় ৫৪ হাজার ৯২৪ টাকা। যা অপরাপর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে বহুলাংশে কম।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ এর ২৭(৫) ধারা অনুযায়ী, সরকার বা অন্যান্য বৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত অনুদান বা আয় থেকে প্রয়োজনের নিরিখে বৃত্তি বা উপবৃত্তি দেয়ার কথা রয়েছে। করোনা মহামারীর এই ভয়াবহ সংকটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে আসন্ন বাজেটে এই সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে সম্পূরক অর্থ সহায়তা বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। পহেলা বৈশাখ ও মুজিব বর্ষের উদ্বৃত্ত অর্থ ও আসন্ন বাজেটে সম্পূরক অর্থ সহায়তা খাতে টাকা বরাদ্দ নিতে হবে।
সম্প্রতি করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়া সমস্যা নিয়ে ক্যাম্পাস খুললেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববদ্যিালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, ক্যাম্পাস খুললেই আমরা শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া সমস্যা নিয়ে কাজ করবো। এখন কোনো সমস্যা হলে প্রক্টরকে জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন। আমরা এখন শিক্ষার্থীদের খাবার ও চিকিৎসা সংকট নিয়ে কাজ করছি।