করোনা সংকট

বেরোবিতে তীব্র সেশনজটের শঙ্কা, উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। করোনাভাইরাসের সংকটের কারণে মার্চের মাঝামাঝি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও (বেরোবি) বন্ধ রয়েছে। আগে থেকেই সেশনজটে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এ যেন মরার উপর খরার ঘা।

এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী তীব্র সেশনজটের শঙ্কা মাথায় নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। তাছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে আবাসিক সংকট, শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা, প্রশাসনিক অস্থিরতা বৃদ্ধিসহ নানান সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোন্নাফ আল তুষার কিবরিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট সমস্যাগুলো ধারাবাহিকভাবে হয়েই আসছে। করোনার প্রভাবে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। শিক্ষকদের এই চিন্তা এখনো হয়তো মাথাতে নেই যে, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন। আমাদের শিক্ষকরা চিন্তিত কবে ক্যাম্পাস খুলবে আর আবার উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে। কিন্তু শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক কোন চিন্তা শিক্ষকদের মাঝে নেই।

শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু মোন্নাফ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পড়াশোনাও বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। যারা টিউশনি করে চলতো তাদের যে অবস্থা হবে সেটাকে নার্সিং করার মতো মন-মানসিকতা আসলে আমাদের শিক্ষকদের মাঝে এখনো দেখা যায়নি। এটা খুবই দুঃখজনক যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেউ ভাবেনা।

তিনি বলেন, যেহেতু উপাচার্যের শেষ বছর এটা। সেক্ষেত্রে প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তা করবেনা। তারা চিন্তা করবে কিভাবে প্রতিটি প্রজেক্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়। সকলেই এসব চিন্তার কারণে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি হতাশ হয়ে পরবে। তাই প্রতিটি বিভাগের উচিৎ হবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর নির্ভর না করে বিভাগ থেকে আসন্ন ভয়াবহ সেশনজট নিরসনের জন্য কাজ করা। এসময় প্রতিটি শিক্ষককেই শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তরিক হয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধও করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের সাবেক সভাপতি যুগেশ ত্রিপুরা বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সেশনজট সমস্যার সাথে একাডেমিক এবং আর্থিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। যেহেতু এ বিষয়ে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইউজিসির পক্ষ থেকে এসব থেকে উত্তোরণের জন্য করণীয় এখনো পরিস্কার করেনি।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা প্রথমত মেসের ভাড়া নিয়ে বড় একটা সমস্যায় পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা টিউশনি করিয়ে নিজের এবং পরিবারের খরচ বহন করতো। কিন্তু এখন ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় টিউশনিও বন্ধ। যার কারণে মেসের ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন হলের ভাড়া মওকুফ করলেও মেসের ভাড়ার বিষয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের উচিৎ করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ও মাসিক বেতন মওকুফ করা। এজন্য প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নানামুখী সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, সেশনজট, আবাসন, ক্লাশরুম সংকটের পাশাপাশি প্রশাসনিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষের দিকে চলে আসার কারণে বিরোধী পক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের চাপ হতে পারে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধও থাকতে পারে। অনেক নিয়োগ থেমে আছে সেটাও একটা বড় সমস্যা হতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলো শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় আয়তনে অনেক ছোট। ক্যাম্পাস খুললে ক্লাশ করার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাশ করতে পারবেনা আর এ নিয়ে আশংকা বিরাজ করছে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও আবাসিক হলগুলোতেও এই অবস্থা থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী শিউলী আক্তার সোমা বলেন, এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে দুই থেকে তিন বছরের সেশনজট। এরপর করোনার এই ছুটি সেগুলোকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক বড় সমস্যা হবে। পাশাপাশি অনেকের অর্থনৈতিক চরম সমস্যা ধারণ করবে।


সর্বশেষ সংবাদ