০৩ মে ২০২০, ২০:১৭

ভাল নেই টিউশনি নির্ভর শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাসে সংক্রমনে গোটা বিশ্বে বইছে লাশের মিছিল। যেন পৃথীবি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়ছেন টিউশনি করে খরচ চালানো শিক্ষার্থীরা। টিউশনি না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমনই কষ্টের গল্পের কথা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন করোনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান বলেন, ‘এনজিও থেকে ধার করা টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য টিউশনি ছিল একমাত্র সম্বল। রাতের আঁধারে অচেনা শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়ে টিউশন খুঁজে পাই। নিজে চলে পরিবারকে সহায়তা করার একমাত্র পথ ছিল এটি। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় দেশ আজ বন্দী সাথে বন্ধ হয়ে আছে জীবিকার পথ। মানবেতর জীবনযাপন করছি, জানিনা কবে এই ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবো।’

সদ্য পড়াশুনা শেষ করে চাকরি যুদ্ধে নামা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ বলেন, ‘অনেকে আছে যারা টিউশনির টাকা দিয়ে শুধু নিজে চলেনা বরং পরিবারকেও টাকা পাঠানো লাগে। তিনি বলেন, আমার এক বন্ধুর বাবা মারা যাওয়াই পরিবার তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সে টিউশনি করে মাসে ১৫,০০০ টাকা পায়। আর এ টাকা দিয়ে নিজের খরচসহ দুই ভাই বোন ও মায়ের খরচ ভালোভাবে চালিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টিউশনি বন্ধ রয়েছে। আর এখন করোনার কি হবে পরের কথা আপাতত বেঁচে থাকায় যে কঠিন হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি এ করোনা পরিস্থিতি যেন দ্রুত স্বাভাবিক হয়।’

লোক-প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবীর হোসেন বলেন, ‘সেকেন্ড টাইম ভার্সিটি এডমিশনের সময় বাবা জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল। ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর ম্যাচ খরচ ও পড়াশোনার খরচ বহন করার জন্য টিউশন ছাড়া আমার আর কোনো পথ ছিল না। আল্লাহর রহমতে দুইটা টিউশন পেয়েও গেছিলাম। কিন্তু বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে এখন সব ছেড়ে বাড়িতে বন্দি। অপেক্ষার প্রহর গুনি কবে এই মহামারী ও দন্যতা থেকে মুক্তি মিলবে। আর কবে আমি আমার টিউশনিতে ফিরতে পারবো।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথম্যাটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘চিন্তার শেষ নেই, কি করে কি করব বুঝতে পারছি না। কিভাবে চলবে দিন। বাড়ি ভাড়ার জন্য মালিক তাগাদা দিচ্ছে। এদিকে পরিবারের রান্নার জিনিসপত্রও তলানিতে। দেশে লকডাউন চলায় একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ টিউশনি এবং বাবার উপার্জন ও বন্ধ। যত দিন যাচ্ছে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। প্রার্থনা করি পৃথীবি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে। এজন্য পড়াশুনার খরচের যোগান দিতে হয় আমাদের নিজেদের। এখন মহামারি করোনার নীল থাবাা উপার্জনের প্রধান উৎস টিউশনি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছি তেমনি অসহায় বাবা মায়ের পরিবারের বোঝা হয়ে উঠেছি।’

আরেক শিক্ষার্থী মিঠুল মিয়া বলেন, ‘চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে টিউশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। ফলে এই সংকটময় মুহূর্তে পরিবারকেও আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারছি না। এ দুঃসময় কেটে যাক এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেন পুনরায় ফিরে পাই।’