০২ এপ্রিল ২০২০, ২০:১৮

ক্যাম্পাসটা আজ নীরব নিস্তব্দ

ছবি তুলেছেন শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মুন্না  © টিডিসি ফটো

এর আগে কখনো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খবি) ক্যাম্পাসে জাতীয় ও সরকারি ছুটি ব্যতীত এতো নীরব নিস্তব্ধতা দেখা যায়নি। সারা পৃথিবী যখন কাঁপছে করানোভাইরাসে তখন বাদ যায়নি আমাদের বাংলাদেশও। যার ফলে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মার্চের ১৭ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় সবাই ছুটে গেছে নিজের গন্তব্যস্থলে। ফলে শিক্ষার্থীবিহীন প্রানহীন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে খুবিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে চিরচেনা উপচে পড়া ভীড়ের মাঝে ইচ্ছা করলেই হারিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ক্যাফেটেরিয়ায় বসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দেওয়ার দৃশ্যগুলো আজ হাহাকার করছে ধূ ধূ মরুভূমির মত। যুক্তি, তর্ক, বির্তক ও সংগঠনগুলোর আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই ক্যাফেটেরিয়ায় নেই কোন ব্যস্ততা। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আজ মুখরিত নেই অদম্য বাংলা। প্রতিটি সময় গল্প আড্ডায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এর একটু পাশেই সাইদুল ভাই, হুমায়ুন ভাই ও তপন দাদার চায়ের দোকানগুলো খা খা করছে।

অথচ সকাল থেকে শুরু করে দুপুর গড়িয়ে বিকাল এর পর সন্ধ্যা বেলায় চা ও হরেক রকমের জুস খেতে, পুরির টেস্ট নিতে ছুটে আসার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। এখন আর বিকাল গড়ালে ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে কেউ আসে না। আজ কেউ নেই। সবাই চলে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। হোম করেন্টিনে বসে ক্যাম্পাসকে অনেক মিস করছেন।

সয়েল, ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন সরদার দীপ্ত। তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে খুব দ্রুত রেডি হয়ে ক্লাসে যাওয়া, হল রোডে নাস্তা করা, তপনে আড্ডা দেওয়া বা মাঝরাতে বেসুরো গান গাওয়া ক্যাম্পাসে।ক্যাম্পাসটা পুরোপুরি জীবনের সাথে মিশে গেছে তাই প্রতি মুহুর্তে মিস করছি। দ্রুত ফিরতে চাই ক্যাম্পাসে প্রচুর ক্লাস, সিটি আর ল্যাবের প্যারা থাকলেও দিনশেষে ক্যাম্পাসটা ই যেন আমার নিকট এক টুকরো স্বর্গ।

ইংরেজি ডিসিপ্লিনের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহম্মেদ প্রিয় ক্যাম্পাসে দ্রুত ফিরে আসার কথা জানিয়ে বলেন, পরিবার ছাড়া বাইরে থাকা, পড়ালেখার চাপ সবমিলিয়ে আমার মধ্যে সর্বদা কাজ করে বাড়ি ফেরার আকুলতা। তবে এবার বাড়ি ফেরাটা হয়েছে অন্য রকম ভাবে। কারণ করানোভাইরাস যাতে সহজে সংক্রমিত না হয় আমাদের দেশে। তবে দেশের ভালোর জন্য ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে আসলেও। ক্যাম্পাস যে কতখানি জায়গা দখল করে ফেলেছে তা হয়তো এভাবে হঠাৎ ছেড়ে না আসলেই বুঝতাম না।

ছুটির পর পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এরপর আবার নতুন টার্ম রেজিষ্ট্রেশন শুরু হয়। এভাবে খুবি চলে তার একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসারে। তবে এবার সবকিছু থমকে গেছে করানোভাইরাসের প্রভাবে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই কোন দুশ্চিন্তা নেই কেননা দেশের অবস্থা যত দ্রুত সম্ভব ভাল হবে তত দেশ আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

এখন সবাই ছুটে যেতে চায় তার প্রিয় ক্যাম্পাসটিতে। শুরু করতে চায় আগের মত চিরচেনা আড্ডা ও গল্পের আসর। প্রিয়জনদের মুখের এক টুকরো হাসির মাঝে খুঁজতে চায় বেঁচে থাকার আনন্দটুকু। এসব আশা প্রত্যাশ নিয়ে প্রতিটি দিনের প্রহর কাটে আশায় আশায় ক্যাম্পাসে ফেরার আকুলতা নিয়ে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর।