০৭ মার্চ ২০২০, ১০:৫৩

মুজিব বর্ষ শুরুর আগেই চার দফা সংঘর্ষে চবি ছাত্রলীগ

বিজয় ও কনকর্ড-সিক্সটি নাইন গ্রুপের সংঘর্ষে ভাংচুর করা হয় এ এফ রহমান হল, রক্ষা পায়নি ছাত্রদের মোটরসাইকেল  © টিডিসি ফটো

মুজিব বর্ষ শুরুর আগে এবং স্বাধীনতার মাসের প্রথম সপ্তাহেই চার দফা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপ। এতে অর্ধশতাধিক আহত ও অন্তত ৬০ জনকে আটক করা হয়, পরে যাচাই-বাছাই ও সমঝোতার মাধ্যমে সবাইকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের প্রায় ৮৭ টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো।

আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আর এই মাহেন্দ্রক্ষণ শুরুর আগেই তাঁর হাতে গড়া ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে জড়াচ্ছেন সংঘর্ষে। অস্থিতিশীল করে তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ দায়িত্বশীল নেতারা।

সংঘর্ষের সূত্রপাত: ১ মার্চ (রবিবার) একাউন্টিং বিভাগের ক্রিকেট খেলার অধিনায়ক নির্ধারণ নিয়ে প্রথমে বাকবিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী গ্রুপ ‘সিএফসি’ ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী ‘সিক্সটি নাইন’। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বসে মিমাংসা করে বিষয়টা।

এ এফ রহমান হলের ভাংচুর পরবর্তী অবস্থা

 

ঘটনার দ্বিতীয় দিন: ২ মার্চ (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে ‘কনকর্ড’ উপ-গ্রুপের কর্মী বোরহানুল ইসলাম আরমানের সাথে বাকবিতণ্ডা হয় আবির নামের ‘বিজয়’র এক কর্মীর। এই ঘটনার জের ধরে ৩ মার্চ (মঙ্গলবার) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় আবিরের ওপর হামলা চালায় কনকর্ডের কর্মীরা। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।

পরে ৪ মার্চ (বুধবার) বিকালে কনকর্ডের কর্মীরা শাহ জালাল হলের সামনে নাস্তা করতে আসলে পূর্ব ঘটনার জের ধরে বিজয়ের কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ধাওয়া খেয়ে কনকর্ডের নেতা-কর্মীরা শাহ জালাল হলে ঢুকে পড়লে হলে ঢুকে কনকর্ডের এক কর্মীকে মারধর করে বিজয়ের কর্মীরা। পরে, শাহ জালাল হলে অবস্থানরত আরেক গ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মীরা বিজয়ের কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। পরে দু’পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ও কাচের বোতল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মারধরের শিকার কনকর্ডের ওই কর্মীকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে চবি মেডিকেল ও পরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ সংঘর্ষে মোট ৪ জন আহত ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয় যখন রণক্ষেত্র:

বুধবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১টায় উপ-গ্রুপ বিজয়ের কর্মীদের সাথে সিক্সটি নাইন ও কনকর্ডের কর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এসময় ৬ রাউন্ড ফাকা গুলি ও ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহত হয় অর্ধশতাধিক। পুলিশের অভিযানে আটক হয় উভয় পক্ষের ৫৭ জন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেওয়া হয় ৫০ জনকে। ভাঙচুর করা হয় হলের প্রায় ৮৭ টি কক্ষ। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয় পুরো ক্যাম্পাসে।

আবাসিক হলের ছাত্রদের ভাংচুরকৃত মোটরসাইকেল

 

অবশেষে সমঝোতায় ছাত্রলীগ:

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে সব গ্রুপের নেতাদের বৈঠকের পর সমঝোতায় শেষ হয় উক্ত বিবাদ। সমঝোতায় সিদ্ধান্ত হয়, বুধবার (৪ মার্চ) সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিবে তার ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে প্রশাসন। অন্যদিকে বিজয় গ্রুপকে সোহরাওয়ার্দী হলে উঠতে দেয়া হবে। ভাঙচুর ও মোটর সাইকেলের বিষয়ে উপাচার্য দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। অন্যদিকে আটক ৭ জনকে ছেড়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

যা বলছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি:

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, এ সংঘর্ষের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। চবি দীর্ঘদিন জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল, অল্প সময়ে আমরা ছাত্রলীগের রাজনীতি কায়েম করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু ওই সময়ের যে শিবিরের লোকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়ে গিয়েছে এরাই আসলে বার বার বগি ভিত্তিক সংগঠনগুলোর নাম দিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।

সভাপতি আরও বলেন, সংঘর্ষের মূল কারণ হচ্ছে, কিছু অনুপ্রবেশকারী ও বগি ভিত্তিক সংগঠনগুলোর লাগামহীন রাজনীতি। যেহেতু কেন্দ্র থেকে বগি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকরী ভূমিকা নিলে আমার মনে হয়, যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ কমে আসবে।