খেলাধুলায় সেরা গণ বিশ্ববিদ্যালয়
রোমান কবি জুভেনাল বলেছেন “মানুষ দুইটা জিনিসের জন্য সবসময় উদ্বেগ থাকে এর একটি হলো রুটি অন্যটি খেলাধুলা।” কবি, তার কথার মাধ্যমে এটাই বুঝাতে চেয়েছিলেন জীবনধারণের জন্য যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমন বিনোদনেরও।
কবি ভুল কিছু বলেননি, খেলাধুলা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ একটি অংশ। শুধু মন খুঁশি কিংবা ভালো রাখা নয়, শরীর স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বুদ্ধির বিকাশ, কাজে কর্মে স্বচ্ছলতা, খারাপ ও অসৎ কাজ থেকে দূরে রাখা, সুস্থ মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি পড়াশোনায় সতেজতা ভাব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে খেলাধুলার ভূমিকা অসাধারণ। আর সে কারণেই মানুষ যেমন খাবারের প্রতি উদ্বেগ থাকে তেমন খেলাধুলার জন্যও।
মানুষের এমন উদ্বেগের মতোই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো উদ্বিগ্ন থাকে পড়াশোনা আর খেলাধুলা নিয়ে। পড়াশোনা-ই যাদের কেন্দ্রবিন্দু তারা খেলাধুলাকে বেঁচে নিয়ছে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শুধু শরীর, মন ভালো ও সুস্থ রাখা নয় পড়াশোনায় চঞ্চলতা নিয়ে আনার মাধ্যমে উন্নত জাতি উপহার দেওয়ার পাশাপাশি সৎ, বুদ্ধিমান এবং দেশের যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক তৈরী করার মত্তে ডুবে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা যদি বলতে হয় তবে বিশেষ ভাবে বলতে হবে সাভারের সবুজ প্রকৃতিতে গড়ে ওঠা খেলা পাগল গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। খেলাধুলায় সেরাদের তালিকায় থাকা অন্যতম একটি নাম এই গণ বিশ্ববিদ্যালয়। খেলাধুলায় অনুপ্রাণ এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় রেখে চলছে প্রতিভার স্বাক্ষর। শুধু ছেলে নয়, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাও কোন অংশে কম নয়। বরং, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা খেলাধুলায় ছেলেদের থেকেও বেশ এগিয়ে আছে। এর মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টির নারির ক্ষমতায়ন এবং নারী অধিকারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। নারীদের বিশেষ ভাবে খেলায় উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি খেলাধুলায় মনোনিবেশ করার সকল সুযোগ, সুবিধায় করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
যাই হোক, খেলাধুলায় অগ্রগামি এই প্রতিষ্ঠান নিজেদের আবারও সেরা প্রমাণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।কেননা আগামী ২৫ শে মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্প -২০২০। আর এই স্পোর্টস কে সামনে রেখেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে খেলোয়াড় যাচাই-বাছাই, চলছে মহারণের প্রস্তুতি। খেলাধুলায় অনুপ্রাণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় অন্যতম হট ফেবারিট হয়েই অংশ গ্রহণ করে।
২৫ শে শুরু হবে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পস -২০২০ এই ঘোষণা আশা মাত্রই সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাকটিস শুরু করে দিয়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। এখান থেকেই শুরু হবে খেলোয়াড যাচাই-বাচাই, চলবে সেরাদের সেরা বের করে আনার প্রক্রিয়া। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পে অনুষ্ঠিত হওয়া ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, সাইক্লিং, অ্যাথলেটিক্স, টেবিল টেনিস ও বাস্কেটবল এই ১০ টি ইভেন্টের সব কয়টি খেলায় প্রাকটিস করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
স্পোর্টস চ্যাম্প ২০২০ কে ঘিরে এমন প্রস্তুতির সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক জনাব হাবিবুর রহমান বলেনঃ- আমরা সেরা টিমটাই পাঠাবো স্পোর্টস চ্যাম্পে আমাদের লক্ষ্য থাকবে গতবারের থেকেও আরো বেশি ভালো করার।খেলাধুলায় যে আমরাই সেরা সেটা আবারো আমাদের প্রমান করে দিতে হবে। সেজন্যই আমরা আগে থেকে প্রাকটিস শুরু করে দিয়েছি।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলাকে কতটা প্রাধন্য দেয় সেটা তাদের খেলার মাঠ এবং খেলাধুলা বিষয়ক সুযোগ সুবিধাগুলো দেখলেই বুঝা যায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের অংশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের খেলার মাঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ঠিক পিছনেই রয়েছে একটি বাস্কেটবল স্টেডিয়াম এবং প্রশাসনিক ভবনের পার্শ্বেই আছে বিশালাকার ফুটবল মাঠ। ফুটবল মাঠের সঙ্গে ক্রিকেট মাঠ এই মাঠের পাশে রয়েছে টেনিস খেলার মাঠ। একাডেমিক ভবনের সামনে রয়েছে ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ।এছাড়াও ইনডোরে আছে টেবিল টেনিস, দাবা, ক্যারাম, লুড়ু ইত্যাদি খেলার সু-ব্যাবস্থা। খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ক্লাসে উপস্থিতি জনিত সমস্যায় পড়তে হয় না। নারী খেলোয়াড়দের খেলাধুলায় নিয়ে আসার জন্য রয়েছে চমকপ্রদ সুবিধা। নারীরা খেলায় অংশগ্রহণ করলে ২৫% টিউশন ফি রেয়াতের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
খেলাধুলায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সেরা সেটা তাঁদের সাফল্য গুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর চেতনায় গড়ি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হওয়া বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পস- ২০১৯ এ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে এবং মেয়ে উভয় দল মোট ১০ টি ইভেন্টের ৭টি তে অংশ গ্রহণ করে ৪ টি ইভেন্টে সাফল্য অর্জন করেছে।এর মধ্যে ৩টি ইভেন্টে শুধু মেয়েরাই। মেয়েদের এমন সাফল্য থেকে বুঝা যায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা খেলা ধুলায় কতটা এগিয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্প -২০১৯ এর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হলো ফুটবলে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী এবং পুরুষ উভয়ই চ্যাম্পিয়ন। যার দরুণ অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ফুটবলের স্বর্ণে ভাগ বসাতে পারেনি।এই থেকে এটাই পরিষ্কার ফুটবলের স্বর্গরাজ্য হলো গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গণ বিশ্ববিদ্যালয় যে ফুটবলে সেরা সেটা প্রমাণ করে দিল ফারাজ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯- এর সময়ও।সেখানে গণ বিশ্ববিদ্যালয় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
এছাড়াও ক্লেমন ইনডোর ক্রিকেট টুর্নামেন্টে গণ বিশ্ববিদ্যালয় বেশ ভালোই খেলে।যদিও বড় কোন সাফল্য ধরা দেয়নি তবুও ভালো খেলার মাধ্যমে বহু সুনাম কুড়িয়েছে।
এতসব সাফল্যে মোড়ানো গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিড়া জগতে তাদের অবস্থান বেশ ভালো ভাবেই ধরে রাখতে চাই, এগিয়ে যেতে চাই সুস্থ ও সবল মেধাবী জাতি গঠনে। তারই প্রচেষ্টা হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলোকে আরো যুগপযোগি করার প্রায়াস চালাচ্ছে।সম্প্রতি একটি ব্যায়মগারও খোলা হয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে শুধু খেলোয়াড নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও শরীর চর্চার সুযোগ পাবে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আফাতত লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পস -২০২০।দেশের সরকারী এবং বেসরকারি মিলিয়ে অর্ধশতাধিক এর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা মোট ১০টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রায় ৪০০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এবার ২য় বারের মতো এই প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করবে যেখানে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সর্বাধিক ভালো করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন ক্রিড়া বান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় বাংলার সর্বস্তরে গড়ে উঠুক সেই প্রত্যাশা সকলের। ক্রিড়া জগতে দুর্দান্ত প্রতিভা রাখতে শিক্ষার্থীদের যেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সকল সুবিধা দেওয়া হয় সে আশাবাদ থাকবে।তবেই এগিয়ে যাবে ক্রিড়াবিদরা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।