০২ মার্চ ২০২০, ০৬:৪৭

বন্ধ হচ্ছে অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ও গাইড বিক্রি

সংগৃহীত

বড় পরিবর্তন আসছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একমত হয়েছে। নতুন এ পদ্ধতির প্রভাব পড়বে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোচিং ও গাইড বই বাণিজ্যে। বড় কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকলেও বন্ধ হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিশেষায়িত অর্ধশতাধিক ছোট ছোট কোচিং ও গাইড বই বিক্রি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের খরচ এবং সময় সাশ্রয় করা। এক্ষেত্রে ভর্তি আবেদন ও যাতায়াতের বাইরে খরচের বড় একটি অংশ চলে যায় কোচিংয়ের পেছনে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে কোচিংয়ে ভর্তি হয়। কেউ কেউ একাধিক কোচিংয়েও ভর্তি হন। শিক্ষার্থীদের চাহিদা থাকায় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা কোচিংও গড়ে উঠেছে। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ফলে এ ধরনের বিশেষায়িত কোচিং, গাইড বই ও সাপ্লিমেন্ট বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে।  

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কোচিংগুলো স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে। কেননা নতুন পদ্ধতিতে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একসঙ্গে পরীক্ষা হবে। এরপরও রাজধানীকেন্দ্রিক পরিচালিত কোচিংগুলো হয়তো তাদের ব্যবসা চালিয়ে নেবে। তবে আমি মনে করি, সরকার একটু কঠোর হলে সব ধরনের কোচিং বাণিজ্যই বন্ধ করা সম্ভব।

দেশের কৃষিভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মূলত মেডিকেল কোচিংয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করে থাকেন। যদিও বাকৃবির ভর্তি পরীক্ষার দেড় থেকে দুই মাস আগে ময়মনসিংহে ১০ থেকে ১৫টি কোচিং সেন্টার শুধু বাকৃবিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— সোনালিকা, নেটওয়ার্ক, অ্যাডমিশন প্লাস, এগ্রি ভার্সিটি প্লাস।

একইভাবে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকটি কোচিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে— রেডিয়াম ও কম্পাস। এছাড়া শিউর সাস্ট, সাস্ট কিউ, সাসটেক ও সাস্ট সিক্সারসহ বেশি কয়েকটি গাইড বই বিক্রি হতো শাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষার জন্য।

কোচিং রয়েছে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্যও। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দিনটি কোচিং কার্যক্রম চালায়। এগুলো হলো— ভারটেক্স, কর্নিয়া ও স্কুল বেল। নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত কোচিং সেন্টার ভারটেক্স। কোচিংয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা তিন ইউনিটের জন্য তিনটি গাইডও বের করতো ভারটেক্স। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কোচিং ও গাইড বই কার্যক্রম বন্ধ করবে ভারটেক্স। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রের সংকলন করে বিশেষ প্রশ্নব্যাংক বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ভারটেক্স পরিচালকের। এ প্রসঙ্গে কোচিং পরিচালক জানান, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝোঁক থাকবে রাজধানীকেন্দ্রিক কোচিংগুলোর দিকে। এতে বিশেষ করে ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ পরিবার সব সময় ছাত্রীদের স্থানীয় কোচিংগুলোতে পড়াতে চায়।

দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য রয়েছে কোচিংয়ের ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী দিনাজুপরে লজিক নামের একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। কোচিংয়ের নামে একটি গাইড বইও বাজারে ছেড়েছেন তিনি। এর বাইরে আরো কয়েকটি গাইডবইও বাজারে পাওয়া যায়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিশেষ কোনো কোচিং না থাকলেও রয়েছে গাইড ও সাপ্লিমেন্ট বাণিজ্য। এরমধ্যে রয়েছে ময়নামতি ও অ্যাডভাইস।

এদিকে নতুন পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে বড় কোচিংগুলোও। এইচএসসি পরীক্ষার বাকি মাত্র দেড় মাস। পরীক্ষার পরপরই ক্লাস শুরু করবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংগুলো। অনেক কোচিং আবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেও শিক্ষার্থী ভর্তি করান। যদিও এখনও পর্যন্ত আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রশ্নের ধরন বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এজন্য গাইড বই, লেকচার শিট প্রণয়ন নিয়ে বেশ দ্বিধায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি কোচিংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেবে। শিক্ষার্থীদের চাহিদার বড় জায়গায় থাকবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। যদিও এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ধরন ও প্রশ্নপত্র বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। তাই সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমাদের পরিকল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছে। হাতে বেশি সময়ও নেই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য কোচিং করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না।

তবে নতুন পদ্ধতির পরীক্ষায় কোচিংয়ের জন্য খুব বেশি সময় পাবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের খরচ ও হয়রানি কমিয়ে আনা। পরীক্ষার সংখ্যার কমে যাওয়ায় ভর্তি আবেদন ফি ও যাতায়াত খরচ কমে আসবে। তবে কোচিংয়ের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে খরচের চাপ থেকেই যাবে। তাই সে বিষয়েও ভাবতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে— এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যেই পরীক্ষা নেয়া হবে। সেটির বাস্তবায়ন হলে কোচিংগুলোও খুব বেশি দিন সময় পাবে না।