বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনে বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা
‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তারা। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু করলেন তারা। ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে এ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী মো. জাফর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বাংলা ভাষার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এ কারণে বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘ভাষার জন্য এ কলেজের অনেক অবদান রয়েছে। সে কারণে আমরা চাচ্ছি, বাঙলা কলেজকেই বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হোক।’ এসময় আলোচনা করে দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
তবে এ আন্দোলনের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম মানসুর বলেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয় করে প্রতিবছর বেকার গ্রাজুয়েট তৈরি নয়, যে জাতি ৬৪ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার সক্ষমতা রাখে, তারাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নও করতে পারে। দেশে শুধু ভার্সিটি নাম দিয়ে দাড় করিয়ে রাখলেই চলবে না, শিক্ষার মান এবং পরিবেশ সবকিছুই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
ইভেন্টের বিবরণে আন্দোলনকারীরা লিখেছেন, ‘প্রথমত বাঙালি হিসেবে, দ্বিতীয়ত বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে, তৃতীয়ত আমাদের যেহেতু রয়েছে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। যা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই।
সুতরাং আমাদের একটি মাত্র দাবি- বাংলাদেশে বাংলা ভাষার চর্চা, বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ও আঞ্চলিক বাংলা ভাষা সংরক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার লক্ষে ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
সেটা বাঙলা কলেজ হোক কিংবা নতুনভাবেই হোক- ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে আমাদের দাবি যেহেতু বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ‘বাঙলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত; যার লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষার চর্চা বাড়ানো।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নয় মাস জুড়ে মিরপুরের ঐহিত্যের পারদ বাঙলা কলেজটিতে চলে পাকিস্তানিদের নারকীয় তাণ্ডব। এ কলেজের প্রশাসনিক ভবনের নিচের একাধিক কক্ষকে ব্যবহার করা হতো টর্চার সেল হিসেবে। কলেজের মাঠের ঝোপ-ঝাড়ে ধর্ষণ করা হতো নারীদের।
এ ছাড়াও কলেজটিতে রয়েছে একাধিক গণকবর। যা বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান চিহ্নিত করে- নিয়েছেন সংরক্ষণের দায়িত্ব। তিনি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, মুজিববর্ষে গণকবরগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে বাংলাদেশকে উপহার দিবেন।
এ ছাড়াও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয়মাস ব্যাপী কলেজটিতে বাঙলা সাইনবোর্ড নামিয়ে উর্দু সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমাদের দাবি একটিই- ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিকেই ঘোষণা করা হোক ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’।’