জায়গা নেই, শিক্ষকরা বসবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায়!
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত বসার কক্ষ নেই। ফলে সিনিয়র শিক্ষকরা নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সাথে বসার কক্ষ ভাগাভাগি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য আবাসন ব্যাবস্থা একেবারেই অপ্রতুল।
গত দেড় বছরে প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। তাদের দাবি, শিক্ষক নিয়োগের আগে প্রশাসনের উচিৎ শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষক সংখ্যা ২৫৩ জন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৮জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মাঝে দু’জন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
তবে সে অনুযায়ী একাডেমিক ভবনে শিক্ষকদের জন্য কক্ষ বাড়ানো হয়নি। নতুন নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকরা সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে এক কক্ষে গাদাগাদি করে বসতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার কারও জন্য বারান্দায় আলাদা পার্টিশন দিয়ে কক্ষ করে দেয়া হয়েছে।
একাডেমিক ভবনগুলো ঘুরে দেখা যায়, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাঁচতলায় প্রত্নতত্ব বিভাগে এক কক্ষেই ছয়জন শিক্ষককে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। বাংলা বিভাগে এক কক্ষে পাঁচজন। ইংরেজী বিভাগে চারজনকে, লোক প্রশাসন বিভাগে পাঁচজনকে এক কক্ষে বসতে হচ্ছে।
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় প্রতিটি বিভাগে। সিনিয়র শিক্ষকরাও কক্ষ ভাগাভাগি করে বসেন। এতে করে ক্লাস করার আগে প্রস্তুতি নিতে অসুবিধা হয় বলে জানান শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, সহকারী অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপকরাও কক্ষ ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। আর প্রভাষকরা এক প্রকার ‘গণরুমের’ মতো করে বসছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য যা অস্বস্তিকর।
এদিকে শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থাও নাজুক। তাদের আবাসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পাঁচতলাবিশিষ্ট দু’টি ডরমেটরি রয়েছে। ২৫৩ জন শিক্ষকের বিপরীতে এখানে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ২৮ জন, যা মোট শিক্ষকের মাত্র ১১ শতাংশ। এর মাঝে নারী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চার জন।
ডরমেটরিগুলো ঘুরে দেখা যায়, ডরমেটরি-১ এ মোট ১৬ জন শিক্ষক এবং চার জন কর্মকর্তা থাকেন। আর ডরমেটরি-২ এ ১২ জন শিক্ষক এবং ছয় জন কর্মকর্তা থাকেন। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডর্মেটরিতে খুব নিম্নমানের জীবনযাপন করতে হয় শিক্ষকদের। কক্ষগুলো মোজাইকের। তাছাড়া সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে।
একজন শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় একটি কক্ষ। এ কারণে পরিবার নিয়েও থাকা সম্ভব হয় না তাদের। আবাসন সুবিধা না থাকায় অনেক শিক্ষককেই কোটবাড়ি কিংবা শহরে থাকতে হয়। কিন্তু শিক্ষকদের যাতায়াতে ব্যবহৃত পরিবহনেও ব্যপক সংকট।
পরিবহণ পুল সূত্রে জানা যায়, ২৫৩ জনের বিপরীতে শিক্ষকদের জন্য মাত্র ২০ আসন বিশিষ্ট দুটি মিনিবাস এবং ১২ সিটের দুটি মাত্র মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া ডিনদের জন্য একটি এবং প্রক্টরিয়াল বডির একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এ কারণে বেশিরভাগ সময়ই সি.এন.জি কিংবা অটোতে করে শিক্ষকদের যাতায়াত করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা অনেকটা অবহেলিত। সমাবর্তনেও দেখলাম কিছু শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছে। অথচ সামনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বসে আছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এখন একাডেমিক ভবনগুলোতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা। আমরা সিনিয়র শিক্ষকরাও কক্ষ ভাগাভাগি করছি।’
তিনি বলেন, ‘ক্লাস নিতে হলে শিক্ষকদের প্রস্তুতির একটা বিষয় থাকে। কিন্তু অনেক বিভাগে এক কক্ষেই ৪-৬ জন। বিষয়টি খুব বাজে দেখায়।’ পরিবহণের বিষয়ে বলেন, ‘আগে না আসলে বাসে সিট পাওয়া মুশকিল। পরে অটো বা সি.এন.জি দিয়ে যেতে হয়। প্রশাসনে কাছে অনুরোধ থাকবে শিক্ষকদের এসব অপূর্ণতা দূর করে তারপর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া।’
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বসার জন্য পর্যাপ্ত আসন ছিলো না। সামনের সারিতে স্থানীয় এলাকার ক্ষমতাসীন নেতারা বসে থাকলেও এসময় অনেক শিক্ষককেই বেশ কিছুক্ষণ আসন ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সমাবর্তন শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও শিক্ষকদের জন্য আসন বরাদ্দ রাখা হয়নি। বিষয়টি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘শিক্ষদের জন্য আবাসন, পরিবহণ সবক্ষেত্রেই সংকট রয়েছে। সবাই যেভাবে সংকটের কথা অকপটে বলে যেতে পারে শিক্ষকরা তা পারেন না। আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে এসব বিষয়ে একাধিকবার জানিয়েছি। স্কয়ার ফিট অনুযায়ী বিভাগগুলোকে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া একটি প্রস্তাবও করেছি।’
সংকটের কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘সংকট আছে। নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের মেগা প্রজেক্ট আছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে এসব সংকট থাকবে না। সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’
পরিবহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিক্ষকদের জন্য পরিবহণের শিফট বাড়িয়েছি। গাড়িও বাড়ানো হয়েছে। সামনে আমাদের গাড়ি আসবে। তখন কিছুটা হলেও সংকট কমবে।’