নবীন শিক্ষার্থীদের ভাবনা
বাবা-মা ছেড়ে এসে সিনিয়রদের মাঝে পরিবার খুঁজে পাই
- আখতার হোসেন আজাদ
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০৮ PM , আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:২২ PM
স্বাধীন বাংলাদেশে স্থাপিত প্রথম বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিক শিক্ষা প্রদানের সাথে ইসলামী শিক্ষার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে ১৭৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের এই বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। গত ২৬ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হবার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পথচলা শুরু হয়। সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ ও স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবাগতদের প্রথম দিনের অনুভূতি। তারা বলছেন, পরিবার ছেড়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিনিয়র ভাইয়া-আপু, নতুন বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের মাঝে তারা নতুন দ্বিতীয় পরিবার খুঁজে পান। নবীন এসব শিক্ষার্থীদের কথা শুনেছেন— আখতার হোসেন আজাদ
শীতের শুভ্রতায় প্রকৃতি যখন নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই গুঁটি গুঁটি পায়ে পদার্পণ করলাম স্বপ্নের ক্যাম্পাস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১২টি বছরের অপূর্ণতা পূর্ণতা পেয়েছে ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে। গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভাইবোনদের দেখে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো যখন রাস্তা দিয়ে যেত, বুকের মধ্যে এক ভিন্নরকম অনুভূতির ঢেউ খেলে যেত। হাত দিয়ে ইশারা করার পরেও যখন বাসগুলো থামত না, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির মাধ্যমে স্বপ্নের বাসগুলোতে ওঠার আকাঙ্ক্ষা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যেত। ক্লাস শুরু হওয়ার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আরোহণ করে যখন ক্যাম্পাসে পৌঁছলাম, তখন হৃদয় যেন পরম আনন্দে পরিতৃপ্ত হলো। বিভাগের শিক্ষকদের পিতৃসুলভ স্নেহ ও গঠনমূলক উপদেশ এবং বড় ভাইয়া-আপুদের আন্তরিকতাপূর্ণ ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। আমি অর্জন করেছি নিজের স্বপ্নকে, পেয়েছি পরিশ্রমের ফসল যা আমার আত্মবিশ্বাসকে তরান্বিত করবে।
শৈশব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের স্বপ্ন দেখতাম। অধ্যবসায় আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছি; সেজন্য সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রথমদিন অধীর আগ্রহ, পরম আনন্দ, দুরু দুরু বক্ষে, ভীত এলোমেলো পায়ে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুসজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি। সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও শ্রদ্ধেয় ভাইবোনেরা উষ্ণ স্নেহে বরণ করে নেন। এ যেন ছিল এক স্বপ্নের মিলন মেলা! পরিবার থেকে দূরে এসে যেন আরেকটি পরিবারে মিলিত হয়ে গেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনে যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা! অচেনা এই পরিবেশের প্রতিটি প্রান্ত যেন বৃহত্তর সাফল্য অর্জনে হাতছানি দিয়ে আহ্বান জানাচ্ছে। সেই ডাকে আমি যেন নব যৌবনে উদ্দীপ্ত হয়ে পথ চলতে শুরু করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের ক্লাসে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম মুক্ত পাখির মতো স্বপ্নময় কল্পনার রাজ্যে; যেন তারা আমাদের স্বপ্ন জয়ের প্রদীপ প্রদান করছিলেন। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলে দেশের সেবা করার জন্য নিজেকে সৎ ও যোগ্য নাগরিকে পরিণত করাই আমার একমাত্র পণে পরিণত হয়েছে। পরিবারে বাবা-মা ছেড়ে এসে ক্যাম্পাসের সিনিয়রদের কল্পনাতীত আন্তরিক স্নেহ ও ভালোবাসা এখানে নতুন পরিবার খুঁজে পাই। আর ক্যাম্পাসে অল্পদিনেই কয়েকজন ভালো বন্ধু পেয়ে নিজেকে যেন পরম সুখী অনুভব হচ্ছে।
অরিয়েন্টেশন ক্লাসে বিভাগের শিক্ষক ও বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয়েছি। প্রথম দিন মনের ভেতরে অজানা এক ভয় কাজ করছিল। কিন্তু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী শিক্ষকদের মনোমুগ্ধকর ও উষ্ণ অভ্যর্থনায় নিমিষেই তা দূর হয়ে যায়। বিভাগের সিনিয়রদের হাস্যোজ্জ্বল ব্যবহার যেন আমাদের পরিবারের মেলবন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বপ্নময় স্থান। ভর্তি পরীক্ষা নামক একপ্রকার যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে সেই স্বপ্নময় স্থানে নিজেকে আসীন করতে পেরেছি বলে সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে র্যাগিং নামক ভয়ঙ্কর শব্দটি জড়িয়ে থাকলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যেন সম্পূর্ণ উল্টো! পরম স্নেহে সিনিয়ররা জুনিয়রদের কাছে টেনে সকলকে ভালবাসার জালে জড়িয়ে ফেলেছেন। শিক্ষকদের বন্ধুসুলভ মেলামেশার ফলে যতদিন যাচ্ছে, ততই যেন তাদের প্রতি মুগ্ধ হচ্ছি!
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দিন থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্যাম্পাসের সিনিয়রদের সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছি। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেবার জন্য তাদের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণে আনন্দিত হই। প্রধান ফটকে অবস্থিত জাতির পিতার মুর্যাল, নজর কাড়া শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মুক্ত বাংলা ভাস্কর্য, সততা ফোয়ারা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত শিক্ষার্থী হয়ে যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছি তা বহাল রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
পরিবার ছেড়ে নতুন গন্তব্যে এসে নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। নতুন পরিবেশ, নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে মনের ভেতরে অজানা নিয়েই প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু চিত্র দেখি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম! নিমিষেই সব ভয় উবে গিয়ে শিক্ষক, বড় ভাইবোনদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। আমাদের বরণ করে নেবার জন্য বিভাগের আয়োজনসমূহ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে স্মৃতির পাতায়। যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করেছি কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তা যেন পূরণ করতে পারি, সেজন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করি।