৩০ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৩৭

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্যয় মাত্র ৭৪১ টাকা

  © সংগৃহীত

১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজগুলোকে ঢাকা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে আলাদা করে জাতীয় পর্যায়ে একটি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা এবং ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর পূর্বে ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজগুলো বিভাগওয়ারী ঢাকা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। তারাই তাদের অধিন্যস্ত কলেজগুলোর কারিকুলাম তৈরি করত, পরীক্ষা গ্রহণ করত এবং সনদ প্রদান করত। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু শুরুতেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়। ছাত্রছাত্রীরা সেশনজটের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। শিক্ষার মান দিন দিন কমতে থাকে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র ভিন্নরূপ পেয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক ব্যয় মাত্র ৭৪১ টাকা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীভুক্ত ও অঙ্গীভূত ২ হাজার ২৬৮টি কলেজে ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে দেশের বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি এ ব্যয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজ ও অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্যয়ে রয়েছে অনেক তফাৎ।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীপ্রতি যা ব্যয়, সে তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় অনেক কম। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ ও করেছে ইউজিসি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ব্যয়ের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গড় ব্যয় সব সময়ই বেশি। জনবল বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতি বার্ষিক ব্যয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯০২ টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৮ হাজার ৯৬২ টাকা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ২ লাখ ৩২ হাজার ২৪২ টাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ৭০৬ টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৪ হাজার ৯২৪ টাকা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ১১ হাজার ৫৯২ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৭ হাজার ৮৯৩ জন আর কর্মচারী আছেন ২ হাজারের বেশি। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৬৯২ শিক্ষার্থী আছেন, আর কর্মচারী আছেন ৭৯৫ জন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থী, আর কর্মচারী রয়েছেন ৩৬৫ জন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থী ৩০০ জন হলেও কর্মচারী রয়েছেন ১১৫ জন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক, ১৪ হাজার ১৪২ শিক্ষার্থীর জন্য কর্মচারী আছেন ৬৩৪ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থী আছেন, আর কর্মচারী রয়েছেন ৪ হাজার ৮৬৩ জন। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ১ জন শিক্ষক। জনবল বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ব্যয় বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

উল্লেখ, ইতিমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার কাঠামো পরিবর্তনসহ ৫ দফা দাবী আদায়ে উপাচার্য ও রেজিষ্টারকে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ’ কেন্দ্রীয় কমিটি। দাবী গুলো হলো- প্রতিবছরে সমাবর্তন আয়োজন করতে হবে; কলেজগুলোতে সরকার নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত আদায় করা যাবেনা; সকল বিভাগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবহারিক কোর্স চালু এবং গবেষণাগার চালু; মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকট দুর করতে হবে এবং কলেজগুলোকে শুধু সনদপ্রাপ্তির কেন্দ্র না করে সংস্কারের মাধ্যমে কর্মমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে।