কুবির সমাবর্তনে দেয়া মূল সনদপত্রে ভুলের ছড়াছড়ি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তনে দেওয়া শিক্ষার্থীদের মূল সনদপত্রে বানান ভুলের ছড়াছড়ি রয়েছে অভিযোগ উঠেছে। কারও বিভাগের নামে ভুল, কারও হলের নামে কিংবা কারো নিজের নামেরও বানানে ভুল। মূল সনদে এমন ভুল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমাবর্তন শেষে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মোস্তফা কামালের মূল সনদে ‘Public Administration’ এর স্থলে ‘Pablic Administration’ লেখা হয়েছে। বিভাগের নামের এ ভুল রয়েছে ঐ ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীর মূল সনদে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের ইংরেজি নামের বানান ‘Nawab Foyzunnesa Chowdhurany Hall’। কিন্তু ঐ হলের শিক্ষার্থীদের মূল সনদে এ নামটিতেও রয়েছে ভুল। যেখানে লেখা হয়েছে, ‘Nawab Faizunnissa Chaudhurani Hall’।
আবার শহীদ ধীরেন্দনাথ দত্ত হলের ইংরেজি নামের বানান দুইটি সনদে দুই ধরণের লেখা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের ইংরেজি বানানেও রয়েছে ভুল।
বিভাগটির এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বিভাগের নামের বানানে ‘একাউন্টিং’ এবং ‘এন্ড’ শব্দ দুটির মাঝে কোনো জায়গা না রেখে একসাথে লেখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষার্থীদের নামের বানানে ভুল রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতটা অজ্ঞ হলে কারো মূল সনদে এরকম ভুল করতে পারে সেটা আমার জানা নেই। আমাদের ব্যাচের সবার সনদে এমন ভুল। সত্যিই দুঃখজনক।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের সকল শিক্ষার্থীরই হলের নামের বানানে ভুল হয়েছে। যেখানে ‘Foyzunnesa Chowdhurany’ এর স্থলে ‘Faizunnissa Chaudhurani’ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ভুলের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই হলের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার বলেন, ‘সমাবর্তনে অনেক বিষয় নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট ছিলাম। তারপরও আমরা চেয়েছি মূল সনদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে। কিন্তু মূল সনদে এমন ভুল আমাদের জন্য হতাশার। প্রশাসনকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে।’
সমাবর্তনে দেয়া সার্টিফিকেট ও সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সবকিছু বাদ দিয়ে চিন্তা করলে সমাবর্তনের আসল কাজ হচ্ছে মূল সনদপত্র বিতরণ। আর এই সনদপত্রে ভুল থাকা ‘দায়িত্বহীনতা’র পরিচয়।’
তারা বলেন, ‘যেখানে গ্র্যাজুয়েটদেরকে সম্মান দেয়ার কথা, সেখানে উল্টো ভোগান্তিতে পড়েছে সবাই। এছাড়া গ্র্যাজুয়েটরা অনেক আশা নিয়ে সমাবর্তনে আসেন, অথচ তাদেরকে ছেঁড়া গাউন ও নিম্নমানের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে।’
এবিষয়ে জানতে সনদ তৈরি ও বিতরণ উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘মূল সনদে ভুল হওয়ার বিষয়টি মাত্র জানতে পারলাম। ভুল হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা অনেকবার যাচাই করেছি। সে সময় নাম ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বারে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা রোববার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘যে যে সনদপত্রে ভুল হয়েছে সেগুলো কোন ফি ব্যতীতই পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। একসাথে প্রায় ছয়-সাত হাজার সনদ তৈরি করতে গিয়ে হয়তো এমন ভুলগুলো হয়েছে। প্রয়োজন হলে সবারগুলোই পরিবর্তন করে দেয়া হবে। তবে মনে হয়না সবার সনদে এমন ভুল হয়েছে।’