২৬ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:১৯

প্রতিষ্ঠার একযুগ পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন আজ

আগের দিন ফটোসেশনে সমাবর্তনের অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। একদল তরুণ-তরুণীর মুখের হাসিটাও যেন সূর্যের আলোর চেয়ে কম নয়। এ যেন দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে কিছু পাওয়ার হাসি, তৃপ্তির হাসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ, গোল চত্বর, শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসের সর্বত্র পড়েছে ছবি তোলার ধুম। কেউ গাউন গায়ে জড়িয়ে, কেউ হ্যাট আকাশে উড়িয়ে আবার কেউ কেউ নানান ভঙ্গিতে নানা সাজে ছবি তোলায় ব্যস্ত। সাক্ষাত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতজনদের সাথে। স্মৃতিতে ভেসে উঠছে একসাথে কাটানো কত গল্প, কত স্মৃতি। এ যে প্রাণের মিলনমেলা।

বলছি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তনের কথা। ২০০৭ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তন। আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সমাবর্তনকে ঘিরে তাই শিক্ষার্থীদের উৎকন্ঠার শেষ নেই।

পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলে আসা কত স্মৃতি, সব যেন এক নিমিষেই চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। পরিচিতজনদের সাথে দেখা হচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে!’

সমাবর্তন সফল করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে গ্র্যাজুয়েটদের জন্য গাউন, হ্যাট, টাইসহ গিফট সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সমাবর্তনের আগের দিন পর্যন্ত এসব নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে সমাবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রায় চার হাজার আসনবিশিষ্ট প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকাল ২টা ৫৫ মিনিট থেকে শুরু হবে সমাবর্তনের মূল আয়োজন। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চেীধুরী এমপি।

সমাবর্তন বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, এবারের সমাবর্তনে মোট দুই হাজার ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট অংশ নিচ্ছেন। যার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী এক হাজার ২২২ জন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় ডিগ্রিধারী এক হাজার ৬৬৫ জন। এদিকে শিক্ষায় অসমান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সেশনের ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করবেন রাষ্ট্রপতি।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

সমাবর্তনের অনুষ্ঠানসূচি: সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনের দিন বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর দুইটার মধ্যে এবং আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে বিকেল আড়াইটার মধ্যে সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করতে হবে। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

এরপর পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির আগমন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ, সমাবর্তনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের স্বাগত বক্তব্য, চ্যান্সেলর কর্তৃক ডিগ্রি প্রদান, স্বর্ণপদক প্রদান, অতিথির বক্তব্য, সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য, ক্রেস্ট বিনিময়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের ভাষণ, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা, জাতীয় সংগীত এবং রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের সমাবর্তনস্থল ত্যাগের মধ্যে দিয়ে বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জয়প্রিয় শিল্পী জেমস, সংগীত ব্র্যান্ডদল এনকোরসহ প্রমুখ।

হলের সিট ছেড়ে দেবে ছাত্রলীগ: প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে আবাসিক হলগুলোতে নিজেদের সিট ছেড়ে দিয়ে গ্র্যাজুয়েটদের থাকার ব্যবস্থা করবে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সমাবর্তনের আগের দিন কুমিল্লার বেশিরভাগ আবাসিক হোটেল, সরকারি আবাসিক স্থানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ভিআইপি গেস্টদের জন্য বুকিং হয়ে যাওয়ার কারণে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক সাবেক শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করেনি। এজন্য সাবেক শিক্ষার্থীদের থাকার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই প্রয়াস বলে জানান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ।

সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবু তাহের। তিনি জানান, সমাবর্তন ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ইতোমধ্যে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট সদস্যদের প্রস্তুত করা হয়েছে।

সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী বলেন, সাবেক শিক্ষার্থীদের একান্ত প্রত্যাশার বিষয় সমাবর্তন। প্রথমবার এত বড় আয়োজন করাটা চ্যালেঞ্জের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।