অর্ধযুগেও বদল হয়নি শাবি ছাত্রলীগের কমিটি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৫৫ PM , আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৫৫ PM
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হ২০১৩ সালের ৮ মে। গঠনতন্ত্র অনুযা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও ইতোমধ্যে এই কমিটি অর্ধযুগ পার করেছে।
কয়েক বার কেন্দ্রীয় কমিটি হলেও বদল হয়নি শাবি ছাত্রলীগের কমিটি। নতুন কমিটি না হওয়ায় অন্তর্কোন্দলে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের রাজনীতি এখন অছাত্র, বিবাহিত, অনুপ্রবেশকারী শিবির-ছাত্রদল, বহিষ্কৃত, মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি।
অর্ধযুগেরও বেশি সময়ের এ কমিটির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কমিটি গঠনের পর থেকেই বন্দুকযুদ্ধে বহিরাগত কর্মী খুন, শিক্ষক পেটানো, সাংবাদিক পেটানো, যৌন হয়রানি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই, মাদক সেবন ও ব্যবসা, র্যাগিং, আবাসিক হলের কক্ষ দখল ও ভাঙচুর, পরীক্ষায় নকল, ফাউ খাওয়া, ছাত্রলীগ নেতা বদরুল কর্তৃক খাদিজাকে কোপানোসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে খোদ সংগঠনেই এখন চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ মে শাবি ছাত্রলীগের সাত সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এরপর মেয়াদ উত্তীর্ণের দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৮ মে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। ওই কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, ছাত্রশিবির-ছাত্রদলসহ বিতর্কিত অনেককেই স্থান দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
কমিটি গঠনের শুরু থেকে গ্রুপিং রাজনীতির কারণে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে বারবার পত্রিকার শিরোনাম হতে থাকে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাস ও হলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ছয় বছরে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সুমন চন্দ্র দাস নামে এক বহিরাগত কর্মী। ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষকদের পিটিয়ে আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ। ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে দিনেদুপুরে কুপিয়ে আহত করে। যার ফলে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।
২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল ক্যাম্পাসে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন ও এর প্রতিবাদ করায় দুই সাংবাদিকের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থকে। ওই সময় কমিটি ৩ মাস স্থগিতও ছিল। হত্যা মামলা থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, মাদক মামলার আসামি শাবি ছাত্রলীগের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী। এছাড়া বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ৮০ ভাগই অছাত্র। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ক্যাম্পাসে নেই কার্যনির্বাহী কমিটির তিন-চতুর্থাংশ সদস্য। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রুহল আমিনের স্নাতক ও স্নাকোত্তর সম্পন্ন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন না করায় ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ১৪৯তম একাডেমিক কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের ছাত্রত্ব বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০০৯-১০ সেশনে ভর্তি হলেও বিগত ৯ বছরে প্রথম বর্ষ পার করতে পারেননি তিনি।
বর্তমান কমটির ২১ সহ-সভাপতির ২০ জনই অছাত্র ও একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী। এদর মধ্যে কেউ বিবাহিত, কেউ চাকরিজীবী বা কেউ বহিস্কৃতদের তালিকায় রয়েছেন। ৯ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৮ জন অছাত্র ও একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী। আবার তাদের কেউ বিবাহিত ও বহিষ্কৃত। ৯ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ৮ জন অছাত্র ও একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ৪২ সম্পাদক ও উপ-সম্পাদকের মধ্যে ৩৬ জন অছাত্র ও ৬ জন চাকরিজীবী। ২৫ জন সহ-সম্পাদকের ১৯ জনই অছাত্র। এছাড়া ৩৫ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের ১৬ জনই অছাত্র।
এদিকে নেতৃত্বে আসার মতো গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও মেধাবী ছাত্রনেতাদের ভাগ্যে জুটছে না পদ-পদবি। ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যাওয়ায় পদ-পদবির আশা ত্যাগ করে তাদের অনেকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম।
মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার অভিযোগ, অদৃশ্য কারণে বিগত ছয় বছরের অধিক সময়েও নতুন কমিটি হচ্ছে না। গুটিকয়েক সিনিয়র নেতা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে গড়িমসি করছে। যার কারণে নতুন কমিটি হচ্ছে না। স্থবির শাবি ছাত্রলীগকে বিভক্তিমুক্ত ও নতুন মেধাবী নেতৃত্বের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা শাবির বিষয়টি জানি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর তালিকা তৈরি করব। তারপর সমাধান করার চেষ্টা করবো।