উপাচার্যই একমাত্র অধ্যাপক যে বিশ্ববিদ্যালয়ে
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৪০ PM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০৩:৩৫ PM
‘বিএসসি পাশ করে একটি মোটামুটি নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে আবেদন করেছিলাম। ভাইভা বোর্ডে প্রথম প্রশ্ন ছিলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। উত্তরে বললাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। পরে জিজ্ঞেস করা হলো— ডিপার্টমেন্টে কত জন অধ্যাপক রয়েছেন। আমি বললাম— কেউ নেই। সর্বোচ্চ সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন।’
‘তখন আমাকে বলা হলো- তোমার ডিপার্টমেন্টে তো অধ্যাপকই ছিল না। তুমি ছাত্র-ছাত্রীকে কি শেখাবে। আমাকে এরপর আর কোন প্রশ্ন করেনি। ওইদিন ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপক না থাকায় আমি খুব অপমানিত হয়েছিলাম এবং কষ্ট পেয়েছিলাম।’
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন মো. ফাহিম সিকদার। সম্প্রতি নিজের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র নিকট। এভাবে অধ্যাপকের অভাবে বিভিন্ন স্থানে ভুক্তভোগী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, পড়ছে নানা সমস্যায়। খোদ জুনিয়র শিক্ষকরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান ছাড়া আর কোনো স্থায়ী অধ্যাপক নেই। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন। এই বিপুল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য চুক্তিভিত্তিক চারজন অধ্যাপকসহ মোট সংখ্যা মাত্র পাঁচজন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি বিভাগে দুই হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে অধ্যাপক সংখ্যা ছিলো সাত জন। পরবর্তীতে বিভাগ সংখ্যা এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও অধ্যাপক সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪টি বিভাগের ১০ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চার জন অধ্যাপক রয়েছে।
একই বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্নকারী আরেক শিক্ষার্থী রাতুল শিকদার বলেন, ‘বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী থাকাকালীন আমি কোনো অধ্যাপকদের সাহচর্য পাইনি। ফলে প্রজেক্ট এবং গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিকনির্দেশনা এবং একাডেমিক পরিবেশজনিত ঘাটতির কারণে কাজগুলো আশানুরুপভাবে করা হয়ে ওঠেনি।’
বর্তমানে দুটি বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এই দুই শিক্ষার্থীই মনে করেন, সামগ্রিকভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণার মানোন্নয়ন করতে হলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপকের বিকল্প নেই।
শুধু শিক্ষার্থীরা নয় অধ্যাপক না থাকায় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষকরাও। ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রোকনুজ্জামান জানান, ‘অধ্যাপক না থাকলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত নতুন শিক্ষকরা এবং সমগ্র বিভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভাগে একজন অধ্যাপক থাকলে তরুণ শিক্ষকরা যেমন তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে, অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে পারে; তেমনি সঠিকভাবে বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।’
চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানবৃদ্ধিসহ সার্বিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অধ্যাপক সংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরে কোনো অধ্যাপক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেয়ায় এবং অধ্যাপক সংখ্যা বৃদ্ধির পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি।’
চলতি দায়িত্ব পালন করায় এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদানের ক্ষমতা না থাকায় তিনি জানান, নতুন উপাচার্য নিয়োগের পরে তারা অধ্যাপক সংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাবেন।