ভাস্কর্য ‘মুক্তির সোপান’ নজরুল কলেজের সেরা অর্জন

  © টিডিসি ফটো

শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসনে বহুতল ভবন নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট নিরসন করা, শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস সংস্কার ও নতুন হল নির্মাণ, কলেজের পাশে পরিত্যক্ত ডাফরিন হলের জায়গায় ছাত্রীদের হল নির্মাণ, লাইব্রেরি নির্মাণ, পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ২০১৯ সালের শুরু হলে ও বছরের জুড়ে বেশকিছু প্রাপ্তি ছিল কবি নজরুল সরকারি কলেজের। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য ‘মুক্তির সোপান’ নির্মাণ অন্যতম। ঘটনাবহুল বছরের নানা বিষয় নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনটি।

বছরের শুরু থেকেই সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের ‍মুখে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য ‘মুক্তির সোপান’ নির্মাণ করা, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ভাড়ায় দুটি বাস চালু, ক্যান্টিনের ব্যবস্থা ও মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ক্রয়, কলেজের এ-বি-সি ভবনে সম্মুখের অংশ রঙ আশ্বাসগুলোর অন্যতম। এছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও মাদকসেবন রোধ, সার্বিক নিরাপত্তার জন্য চারপাশে দেয়াল ও গেট সংস্কার করা হয়েছে এবং পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রাপ্তির মাঝেও অপ্রাপ্তির শেষ নেই শিক্ষার্থীদের। তারা বলেন, ১৪৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী কলেজে একটি ছোট লাইব্রেরি আছে তাতে বসার জায়গা নেই, রিডিং রুম নেই, শ্রেণীকক্ষ সংকট, আবাসন ব্যবস্থা নেই, শিক্ষক সংকট, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই, শৌচাগার গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী, বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, মাঠে বালু উড়ে বেড়ায় সবুজ ঘাস নেই। নেই নেই কেবল নেই। কলেজ প্রশাসনের এই বিষয়গুলো নিয়ে তেমন মাথা ব্যথাও নেই।

গত ৪ ডিসেম্বর কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য ‘মুক্তি সোপান’ উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কলেজের সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেছেন, কলেজের পাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ডাফরিন হলের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে থানা শিক্ষা অফিসকে ২টি ফ্লোর এবং বাকি ফ্লোরগুলো কলেজকে দেয়া হবে।

এছাড়াও কলেজের ১০তলা ভবন নির্মাণের জটিলতা নিরসন করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। এর বাইরেও কলেজের পাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে একাডেমিক ভবন বা হল নির্মাণ করার কথাও বলেন মন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কবি নজরুল সরকারি কলেজের শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসটিকে সংস্কার এবং দখল হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো পুনরুদ্ধার করে বহুতল হল নির্মাণ করা হবে। কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সমস্যা সমাধানে পরিবহন সংকট নিরসন করা হবে।

দীপু মনি আরও বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি ৭কলেজের শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং শিক্ষক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এসকল সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

বছরের শুরুতে সাংবাদিকদের উপর হামলা করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। সেপ্টেম্বরে কলেজ বাসে সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্বে দফায় দফায় অনার্স ও ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ফল প্রকাশের দাবিতে ও গণহারে ফেল করানোর প্রতিবাদে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে মুখর ছিল পুরো বছর।

২৪ অক্টোবর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের মেধাবী শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ হোসেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। এছাড়াও ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারায় কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজাহিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ৯ ডিসেম্বর। বিদায় নেয় কলেজের অনেক পরিচিত মুখ। নভেম্বরে ২০১৯-২০ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ এর জানুয়ারি থেকে আবারো নবীনদের আগমনে মুখরিত হবে রাজধানীর এই কলেজটি।

কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমার শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আগামীতেও কাজ করে যাবো। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।


সর্বশেষ সংবাদ