ভিসি অফিসের পর্দা কিনতে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলামের বিলাসবহুল অফিস কক্ষ সাজাতে ৮৪ লাখের বেশি টাকা খরচ করেছে কর্তৃপক্ষ। পুরো টাকাই নেওয়া হয়েছে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স ও স্থানীয়সম্পদ (এলআর) তহবিল থেকে। এই প্রোগামগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের অর্থ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে- বিশেষ করে, তাদের শিক্ষা-গবেষণা ও বিভাগের কাঠামো উন্নয়নে খরচ করার কথা। এছাড়া আমদানি করা জানালার পর্দার জন্য ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাবি কর্তৃপক্ষ দেশের দুটি জাতীয় দৈনিকে ভিসির অফিস সাজাতে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে অর্থায়ন এজেন্সি হিসেবে ইউজিসির কথা উল্লেখ করা হয়। তবে ইউজিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, ইউজিসি এমন কোনো তহবিল বরাদ্দ করেনি এবং ইউজিসির নাম ব্যবহার করে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা অনুচিত।
জানতে চাইলে ইউজিসির অর্থায়ন ও হিসাব বিভাগের পরিচালক শাহ আলম জানান, আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন জাবি ভিসির অফিস সাজাতে ইউজিসি কোনো ধরনের তহবিল বরাদ্দ করেনি।
তিনি আরও জানান, তারা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করতে পারে। তবে ইউজিসির নাম ব্যবহার করে পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা একটি অনৈতিক কাজ, কারণ ইউজিসি এজন্য কোনো তহবিল বরাদ্দ করেনি।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে জাবি কর্তৃপক্ষ ভিসির অফিস পরিবর্তন ও সংস্কারের জন্য ইউজিসির কাছে ৮০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলো। কিন্তু ইউজিসির কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই চলতি বছরের জানুয়ারিতে তারা টেন্ডার প্রকাশ করে এবং মার্চে দুইটি তহবিল থেকে জাবি কর্তৃপক্ষ ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স থেকে ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয়সম্পদ তহবিল থেকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে।
জাবির নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী, সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স থেকে আয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা ছাত্রদের কল্যাণ, গবেষণা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
জাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা গত বছরের নভেম্বরে ভিসি অফিস সাজানোর বরাদ্দ চেয়ে ইউজিসির কাছে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসির নতুন অফিসে মোট আটটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ তার বিশ্রামের জন্য, তার ব্যক্তিগত সহকারী ও সচিবের জন্য দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর এবং পাঁচতলা এই প্রশাসনিক ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে চার হাজার বর্গফুট জায়গা।
নতুন ভবনের অভ্যর্থনা কক্ষটি বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ করে ২৩ ফুট লম্বা একটি ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। আর ৮৪ লাখ টাকার মধ্যে ৪০ লাখ ১৪ হাজার টাকাই খরচ করা হয়েছে আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিকে যন্ত্রপাতি কেনায়।
নতুন অফিসের জন্য দুই আসনের ১০টি সোফা কেনা হয়েছে। যার একেকটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। এছাড়াও ২ লাখ ৬১ হাজার টাকায় একটি ফাইল কেবিনেট এবং ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় একটি কাঠের কেবিনেট কেনা হয়েছে। কনফারেন্স টেবিলটি ১.৯৯ লক্ষ টাকায় এবং ভিসির ঘরের জন্য অন্য টেবিলটি ৮০,০০০ টাকায় কেনা হয়েছিল। এছাড়া আমদানি করা জানালার পর্দার জন্য ২.৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ধরনের ব্যয় অনেকের চোখে পড়েছে। কারণ তারা আট বছর আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য স্থায়ী শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করতে পারেনি। বিভাগের ছয় ব্যাচের মোট ৩৭০ জন শিক্ষার্থী জহির রায়হান মিলনায়তনে দুটি গ্রিন রুম এবং অর্থনীতির দুটি শ্রেণিকক্ষ এবং নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে প্রফেসর ফারজানা বলেছিলেন, “এটি একটি নতুন অফিস… আপনার মনে রাখতে হবে এটি ভাইস চ্যান্সেলরের অফিস। এই ব্যয় কেবল আমার ঘরের জন্য নয়, পুরো উপাচার্যের অফিসের জন্য।
আপনি বলছেন পরিমাণ ৮৪ লক্ষ টাকারও বেশি ... এটি যথেষ্ট নয়। আপনি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউজিসি-র মতো অফিসগুলিতে যেতে পারেন। আমি এই অফিস চিরকাল ব্যবহার করব না। আমি আরও দু’বছর ধরে (উপাচার্যের) পদটি ধরে রাখব। তারপরে অন্য উপাচার্য এটি ব্যবহার করবেন।
অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ, যিনি ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত জাবি ভিসি ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যখন উপাচার্য ছিলাম, তহবিলের ঘাটতির কারণে আমাদের উদ্যোগগুলি বাস্তবায়নে প্রায়শই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই।’
জাবি ভিসির নতুন অফিসে ব্যয়বহুল অলঙ্করণ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, একজন ভাইস চ্যান্সেলরের উচিত অন্য যে কোনও বিষয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।