‘স্ক্রিন সমাবর্তনে’ অপমানবোধ করছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ সোমবার (০৯ ডিসেম্বর)। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মাথায় ১৯২৩ সালে প্রথম সমবার্তন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন থেকে অধিভুক্ত সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরাও ঢাবির সঙ্গে একই দিনে সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছে। তবে ঢাবি ক্যাম্পাসের মূল অনুষ্ঠান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবর্তনে অংশ নেওয়াকে ‘স্ক্রিন সমাবর্তন’ বলে উল্লেখ করেছেন অধিভুক্ত কলেজের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা।
অধিভুক্ত সাত কলেজের সমাবর্তনে ঢাকা কলেজ ভেন্যু থেকে ঢাকা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা অংশ নিয়েছেন। ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন।
সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আছেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমাবর্তনের জন্য সমান ফি পরিশোধ করার পরও তাদের কোন সম্মানিত অতিথির উপস্থিতি ছাড়াই ‘স্ক্রিন সমাবর্তন’ অংশ নেওয়াটা বরাবরের মত অপমানজনক এবং লজ্জাজনক মনে করছেন তারা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে ভিডিও কনফারেন্স পদ্ধতির কারণে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন সাত কলেজের অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী শাহ আলম বলেন, সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করা আনন্দের। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরো আনন্দের হতো যদি সাত কলেজের সমাবর্তন ভেন্যু রাষ্ট্রপতিসহ অনান্য অতিথিরা আসতেন। পরবর্তী সমাবর্তন থেকে যেন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন।
গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেও সমাবর্তনে অংশ না নেয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এসএম জুয়েল বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করা অপমানজনক। তাই নীরব প্রতিবাদ স্বরুপ সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করিনি। সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে আলাদা সমাবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। যেখানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি এবং অনান্য খ্যাতিমান বক্তারা উপস্থিত থাকবেন।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন, এটা স্পষ্ট বৈষম্য, স্ক্রিন সমাবর্তন কেন হবে? ভিন্ন ভেন্যুতে ভিন্ন দিনে সাত কলেজের সকল কলেজকে একসাথে দেওয়াটা আমাদের সকলের দাবি। এ নিয়ে আমরা অধ্যক্ষের সাথে কথা বললেও তিনি এর সুস্পষ্ট সমাধান দিতে পারেন নি। আশা করি ছোটরা এই বৈষম্যমুলক সমাবর্তনের প্রতিবাদ করবে এবং কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বুঝাতে সক্ষম হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়েল ৫২তম সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অধিভুক্ত সাত কলেজের ১০ হাজার ৪৪ জন। এবারের সমাবর্তনে ৭৯ জন কৃতি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ছয়জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়।
সাত কলেজ আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজ মাস্টার্সের শিক্ষার্থী একেএম আবুবকর বলেন, উচ্চশিক্ষায় সমাবর্তন বড় এক প্রাপ্তির বিষয়। এক্ষেত্রে আমরা যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষার্থী, সেক্ষেত্রে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি সমাবর্তনের বিষয়টাতেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যদি একই দিনে সবার সমাবর্তন করতে হয় তাহলে ঢাবিতে যেভাবে আচার্য-উপাচার্য উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান করেন, সাত কলেজেও এভাবে তাদের উপস্থিতি থাকবে হবে। এছাড়া ঢাবি থেকে ভিন্ন দিনে সাত কলেজ সমাবর্তনের কথা বলছেন এ ছাত্র নেতা।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও সরকারি সাত কলেজের ফোকাল পয়েন্ট আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনো পরামর্শ, অভিযোগ থাকতে পারে। আমরা তাদের মতামতকে সম্মান করি। তবে আমি মনে করি, সমাবর্তনের বিষয় নিয়ে এ ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক নয়। আমরা আপাতত শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে ভেবে দেখবো।